Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

অহেতুক সন্দেহ থেকে কিভাবে নিজেকে মুক্ত রাখবেন


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হচ্ছে সন্দেহ। সন্দেহ কি? সন্দেহ কেন হয় এবং সন্দেহ থেকে মুক্ত থাকার উপায় কি? প্রথমে আমরা জানবো সন্দেহ কি? সন্দেহ হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে মানুষের অহেতুক আগাম চিন্তা। আরেকটু যদি বলি তবে সন্দেহ হলো কোন বিষয় বা ব্যক্তির সম্পর্কে অবিশ্বাস, অপরিপক্ক চিন্তা, অবাস্তব ধারণা পোষণ করা, ভিত্তিহীন মনোভাব কিংবা দ্বিধাগ্রস্থ চিন্তার ফল। সন্দেহ জনিত সমস্যা স্বাভাবিক ঠিক ততক্ষণ যতক্ষণ পর্যন্ত তা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রা অতিক্রম না করে। যদি কোন কারণে সন্দেহ স্বাভাবিক পর্যায় অতিক্রম করে তবে তা অবশ্যই মানষিক রোগের কারণ হতে পারে।

সন্দেহ কেন হয়? মূলত সন্দেহ তৈরি হয় অবিশ্বাস আর ভালোবাসা থেকে। আপনি দীর্ঘদিন ধরে কাউকে প্রচন্ড বিশ্বাস করতেন কিংবা ভালোবাসতেন। কিন্তু এখন আর তাকে কোনভাবেই বিশ্বাস বা ভালোবাসতে পারছেন না। এই যে মানুষটি সম্পর্কে আপনার অবস্থার পরিবর্তন এটাই হচ্ছে সন্দেহ। এখন আপনার প্রশ্ন আসতে পারে কেন এমন হয়? কারণ যাকে আপনি বিশ্বাস করতেন বা ভালোবাসতেন সে কোন না কোন ভাবে তার কথা এক্স,য বা কাজের মাধ্যমে তার সম্পর্কে আপনার ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। যা ব্যক্তি সম্পর্কে আপনার প্রবল বিশ্বাস বা ভালোবাসাকে আঘাত করেছে। ফলে আপনার মধ্যে তার সম্পর্কে একধরনের নেগেটিভ চিন্তার উদয় হয়েছে। 

ফলে আপনি তাকে নিদারুণ ভাবে সন্দেহ করছেন। আবার ধরুন কেউ আপনার বিশ্বাস ভাংগেনি কিংবা আপনার ক্ষতিও করেনি অথচ আপনি তাকে অজথা সন্দেহ করছেন। তাহলে কোন প্রকার ক্ষতি না হওয়া সত্ত্বেও অপর প্রন্তের মানুষটি সম্পর্কে এরকম সন্দেহ আপনার কেন হচ্ছে? এটাকে আমরা ওভার থিংকিং বলতে পারি। কারণ যার সম্পর্কে আপনি সন্দেহ করছেন সে কোন ভাবেই আপনার ক্ষতি করেনি। অথচ দিনের পর দিন তাকেই আপনি সন্দেহ করে যাচ্ছেন। সাধারণ এরকম সন্দেহে আপনার কাছে ঐ ব্যক্তি বা বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য বা উপাত্ত নেই বা থাকে না। তবুও আপনি তা অজথাই করে যাচ্ছেন। যা অপর ব্যক্তির সাথে আপনার সম্পর্কের য মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।


সাধারণত ভালোবাসা এবং বিশ্বাস এ দুইয়ের বিপরীতে গিয়ে সন্দের দানা বাধে। এ দুটি বিষয়ের অপর্যাপ্ততা আমাদের সন্দেহ প্রবণতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। যা থেকে আমরা খুব সহজে মুক্তি পাইনা। এখন আপনি বলতে পারেন যে আপনি বিশ্বাসও করেন না কিংবা ভালোওবাসেন না এমন অনেক বিষয়ে আপনার সন্দেহ তৈরি হয়। এটি মূলত দুটি কারণে হতে পারে। একটি হচ্ছে আপনার মনের ওভার থিংকিং আর অন্যটি হচ্ছে মনের ভয়। ওভার থিংকি বা অতিরিক্ত চিন্তা এমন একটি বিষয় যা আপনাকে চিন্তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখবে। অর্থাৎ আপনি কোন বিষয় সম্পর্কে যতবেশি চিন্তা করবেন ততবেশি আপনি চিন্তার গভীর সাগরে পাড়ি জমাবেন। এমনকি চিন্তা আপনাকে এতদূরের গভীরে নিয়ে যাবে যেখান থেকে আপনি আর উপর দিকে উঠতে পারবেন না। 

আর ভয় হচ্ছে কোন বিষয় সম্পর্কে আপনার অজানা অধ্যায়। অর্থাৎ আপনি যে বিষয়ের সম্মুখীন এর আগে কখনও হননি সেই বিষয়টিতে আপনার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। যেমন: আপনি কখনও নাগর দোলায় চড়েন নি। হঠাৎ আপনি নাগর দোলায় উঠতে গিয়ে ভাবছেন যদি পড়ে যাই? এই যে নাগর দোলায় আগে না চড়া এবং চড়তে গিয়ে পড়ে যাওয়ার এক ধরনের ভয় এটি হচ্ছে সন্দেহ। যদি বিষয়টিকে আমি আরেকটু বিশ্লেষণ করি তবে নাগর দোলার বিষয়টিতে দুটি বিষয় খুবই দৃশ্যমান। ভয় এবং ওভার থিংকিং দুটি বিষয় মিলেই আপনার মনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এখন ধরুণ যিনি ইতিপূর্বে নাগর দোলায় চড়েছেন তিনি কিন্তু নতুন করে এটাতে চড়তে গিয়ে কোন কিছুই চিন্তা করবেন না বরং তিনি এটিকে বেশ উপভোগ করবেন। অর্থাৎ নাগর দোলাতে চড়ার বিষয়ে তার না হচ্ছে সন্দেহ, না হচ্ছে ভয় আর না হচ্ছে ওভার থিংকিং।

এভাবে সন্দেহ বিভিন্ন ভাবে আমাদের মনে দেখা দিতে পারে। এর বিভিন্ন কারণও থাকতে পারে। তবে আমরা বেশ কিছু কারণ সাধারণত বেশি দেখতে পাই। তার মধ্যে কারও দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা জনিত সন্দেহ, কারও দ্বারা হত্যার স্বীকার হওয়া জনিত সন্দেহ, কারও কারও মৃত্যু ভীতি জনিত সন্দেহ, সন্দেহ জনিত কারণে অন্যের দেওয়া খাবার খেতে অনীহা, অপরিচিত জায়গায় না যাওয়ার প্রবণতা, অহেতুক সন্দেহের কারণে কারও সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা তাকে পছন্দ না করা, সন্দেহ প্রবণতার কারণে নিজের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য চেষ্টা করা, সন্দেহের কারণে লিফটে না ওঠা, সন্দেহের কারণে অস্থির অনুভব করা, সন্দেহের কারণে কাছের মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করা সহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এসব সমস্যাগুলো ঠিক তখনই দেখা দিতে পারে যখন একজন মানুষের সন্দেহের প্রবণতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় পরিলক্ষিত হবে। সন্দেহ হচ্ছে মনের অতিরিক্ত চিন্তার ফল। মূলত সন্দেহ কে আমরা অনুমাণ বা ধারণা হিসেবে গণনা করতে পারি। ধরুণ আগামীকাল আমার পরীক্ষা শুরু। আমি আমার রুটিনে দেখলাম সকাল ১০:০০ টায় পরীক্ষা শুরু হবে। এটা জানা আমার জন্য খুব জরুরী ছিল এবং সকাল ১০:০০ টার মধ্যে পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়াও আমার জন্য জরুরী। স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলে আমি আগামীকাল ১০:০০ টায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবো। কিন্তু সবকিছু জানা সত্ত্বেও যদি আমি মনের মধ্যে চিন্তা করি যে, আগামীকাল ঠিক সময়ে আমি পরীক্ষার হলে পৌছাতে পারবো কিনা? আবার কিছু ফেলে রেখে যাব কিনা? অথবা রওনা দেওয়ার পথে কোন দুর্ঘটনার স্বীকার হই কিনা? কিংবা পরীক্ষার খাতায় সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো কিনা?

অর্থাৎ যা ছিল স্বাভাবিক চিন্তা সেটা গড়িয়েছে অতিরিক্ত চিন্তায়। ফলে সময় যত যাচ্ছে সন্দেহ তত বাড়ছে এবং এর পাশাপাশি সমস্যাগুলোও তত দানা বাঁধছে। এখন প্রশ্ন হলো এমন অহেতুক ধারণা বা সন্দেহ হতে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে? মূলত আমরা যদি আমাদের মনের ওভার থিংকিং বা অতিরিক্ত চিন্তাগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি তবে সন্দেহ অনেকটা কমে আসবে। সবচেয়ে ভালো হয় সবকিছু স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করা। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে মনের দুর্বলতা দূর করা। যদিও কাজটি খুব সহজ নয় আবার কঠিনও নয়। মনের দুর্বলতা কে দূর করতে হলে আপনাকে অনেকগুলো কাজ করতে হবে। যেমন: মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখা, ভালোবাসার চর্চা করা, বুঝেশুনে বিশ্বাস স্থাপন করা, বেশি বেশি ভালো বই পড়া, প্রকৃতির কাছাকাছি থাকা, ঘুরতে যাওয়া কিংবা বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ কিংবা লেখার অভ্যাস গড়ে তোলা।

আসুন আমরা বিনা করণে কাউকে সন্দেহ না করি। জীবন অনেক সুন্দর এবং এটিকে আমরা সুন্দরভাবে উপভোগ করি। অহেতুক সন্দেহ আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। একে অপরের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে উঠি। কারও প্রতি সন্দেহ তৈরি হয় এমন সব কাজ বা কথাগুলোকে এড়িয়ে চলি। সবসময় চেষ্টা করি সবার সাথে ভালো সম্পর্ক বাজায় রাখার। মুক্ত ভাবে হাসার চেষ্টা করি। দুঃখ-কষ্ট গুলোকে মনের মধ্যে বেশি জায়গা না দিয়ে বরং জীবনকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করি। সবচেয়ে ভালো হয় ভালো কোন কাজ বা কথা দিয়ে অন্যের উপকারে আসি। অহেতুক কারও প্রতি অস্পষ্ট ধারণা বা অনুমান নির্ভর না হয়ে বরং তার সাথে সরাসরি সুন্দর ভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। যাতে তার অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। প্রয়োজনে তার সাথে বিনয়ের সাথে কথা বলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাওয়া যেতে পারে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, সাবধান! তোমরা অনুমান থেকে বেঁচে থাকো। কেননা অনুমান হচ্ছে সবচেয়ে বড় মিথ্যা। (বুখারী হাদিস: ৪০৬৪) আসুন আমরা মিথ্যা পরিহার করে সত্য ও সুন্দর পৃথিবী গড়ি।
 
Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)