Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

পরী ও মানুষ



পরী ও মানুষ


এক দেশের মাঝখানে ছিল একটি ছোট শান্ত গ্রাম। যেখানে সবকিছু ছিল শান্ত, নির্মল আর সজ্জিত। এই গ্রামটি যেন পৃথিবীর এক অদ্ভুত জায়গা। যেখানে প্রকৃতি সব সময় হাসিমুখে থাকত। আর এই গ্রামটির পাশেই ছিল এক রহস্যময় জঙ্গল। যার মধ্যে ছিল এক পরীদের রাজ্য। গ্রামের মানুষ জানত, পরীরা আছে। কিন্তু তারা কেউ কখনও সরাসরি তাদের দেখেনি। শুধু গল্পে শুনেছিল। পরীরা এক অদ্ভুত মায়াময় সত্তা। যারা পৃথিবীর সৌন্দর্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

অদিতি ছিল এক সাধারণ কিশোর। তবে তার চোখে ছিল বিশেষ কিছু। তার ছিলো একটি অদ্ভুত প্রশ্ন ও জানার তৃষ্ণা। তার হৃদয়ে কিছু আলাদা চাওয়া ছিল। সে জানত, পৃথিবী কেবল পৃথিবী নয়। এর মধ্যেই হয়তো কোনো রহস্য, কোনো জাদু লুকিয়ে থাকতে পারে। একদিন, অদিতি গ্রাম থেকে বেরিয়ে সেই রহস্যময় জঙ্গলে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নিল।

জঙ্গলটি ছিল এক রহস্যময় স্থান, যেখানে আলো এবং অন্ধকার একে অপরের সাথে মিশে যেত। গাছগুলো ছিল বিরাট এবং প্রাচীন। তাদের পাতাগুলি সোনালী রঙের। যেন তারা মশাল হয়ে আলোকিত করছে। অদিতি কিছুক্ষণ চলার পর দেখল, এক প্রাচীন গাছের নিচে কিছু ছোট ছোট দোয়েল বসে আছে। তার মনে হলো, এই দোয়েলগুলো যেন কিছু জানে, কিছু দেখতে পায়। কিন্তু, তাকে দেখে তারা নড়ল না। অদিতি আরো কিছুটা এগিয়ে গেল, আর তাতেই সে দেখল এক অবিশ্বাস্য দৃশ্য।

তার সামনে ছিল একটি স্বর্গীয় পরী রাজ্য। সেখানে ছিল সাদা, সোনালী আলো, আর সমস্ত কিছু ছিল রঙিন। সেই পৃথিবী ছিল এক অন্যরকম বাস্তবতা। সেখানে ছিল সাদা, ঝকঝকে ডানা এবং সোনালী পোশাক পরা পরীরা। তাদের মুখাবয়ব ছিল খুবই মায়াময়, চোখে ছিল অদ্ভুত শান্তি এবং ভালোবাসা। এই পরীরা দেখতে ছিল অনেকটা মানুষের মতো, কিন্তু তাদের দেহে একটা আভা ছিল, যেন তারা অন্য গ্রহ থেকে এসেছে।

অদিতি তখন বিস্মিত হয়ে ভাবছিল, “এটা কী সত্যিই পরীদের রাজ্য?” তার সামনে ছিল এক পরী, যার নাম ছিল এথেলিয়াস। সে ছিল পরীদের রাজা, এবং তার মায়াময় চেহারা দেখে অদিতি বুঝতে পারল, সে তার জীবনের সবচেয়ে বড় রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রাজা এথেলিয়াস, অদিতির দিকে তাকিয়ে এক মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “তুমি আমাদের দেখতে এসেছো, তবে আমাদের রাজ্য দেখা সহজ নয়। এখানে আসলে তোমাকে বিশ্বাস এবং ভালোবাসার এক বিশেষ গুণ থাকতে হবে।”

রাজা এথেলিয়াস পরীদের জীবন সম্পর্কে অদিতিকে বললেন। পরীরা ছিল খুবই সহানুভূতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ। তাদের রাজ্য ছিল একে অপরের সাহায্যে গড়া, যেখানে প্রতিটি পরী ছিল অপরের পাশে। তারা একে অপরকে সাহায্য করত, একে অপরকে সম্মান করত। তাদের রাজ্য ছিল এক স্বর্গীয় জায়গা, যেখানে সবাই মিলে প্রকৃতি ও সৌন্দর্য উপভোগ করত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তাদের ভালোবাসা। পরীরা একে অপরকে খুব ভালোবাসত, কারণ তারা জানত যে, পৃথিবী কেবল তখনই সুন্দর হতে পারে, যখন মানুষ বা পরী একে অপরকে ভালোবাসে।

একদিন, রাজা এথেলিয়াস অদিতিকে একটি বিশেষ উপহার দিলেন—একটি সোনালী পাথর, যা মানুষের পৃথিবীতে অদ্ভুত শক্তি আনতে সক্ষম। “এই পাথরটি তোমার হৃদয়ের সৎ উদ্দেশ্য এবং ভালোবাসার শক্তিকে শক্তিশালী করবে,” বললেন রাজা। “এটি তোমাকে পৃথিবীটাকে আরো সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করবে। তবে মনে রেখো, এটি কেবল ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে হবে।”

অদিতি যখন ফিরে গ্রামে আসল, সে বুঝতে পারল যে, পরীদের রাজ্য তার জীবনে একটি নতুন আলো এনেছে। সে জানল, সত্যিকারের ভালোবাসা কেবল হৃদয়ের মধ্যে নয়, বরং সে ভালোবাসা অন্যদের জন্য কাজ করে, পৃথিবীকে সুন্দর করে তোলার চেষ্টা করে। অদিতি তার নতুন জ্ঞান এবং শক্তি নিয়ে গ্রামের মানুষদের সাহায্য করতে শুরু করল। সে প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে লাগল, ছোট ছোট মানুষের সাহায্য করতে শুরু করল, এবং বিশ্বাস রাখল যে, যদি সে সঠিক পথ ধরে চলে, তাহলে পৃথিবী সত্যিই সুন্দর হতে পারে।

পরে, গ্রামবাসীরা অদিতির পরিবর্তন দেখতে পেল, তারা জানল যে, অদিতির মধ্যে কিছু পরিবর্তন এসেছে। একদিন, অদিতি গ্রামে আসা পরীদের একটি বিশাল দল দেখতে পেল। তারা তাকে এবং তার গ্রামের মানুষদের কাছে এসেছিল, তাদের শক্তি ও ভালোবাসা ভাগ করে নিতে। পরীরা দেখতে এসেছিল, যাতে মানুষের পৃথিবীকে আরো সুন্দর করে তোলা যায়। তাদের দেখা-সাক্ষাতের পরে, মানুষের হৃদয়ও একটু একটু করে বদলাতে শুরু করল। আর সেখান থেকে, পরী এবং মানুষের মধ্যে এক অদ্ভুত বন্ধন তৈরি হলো, যা পৃথিবীকে সত্যিই সুন্দর করে তুলতে সাহায্য করল।

এভাবেই, পরীরা আর মানুষ একে অপরের পাশে এসে পৃথিবীটিকে এক নতুন রূপ দিলো, যেখানে ভালোবাসা, সম্মান এবং শান্তি ছিল সর্বত্র।

ইয়াছিন ইবনে ফিরোজ
অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।