Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

নারীই যেন সর্বদোষে দোষী


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। পৃথিবীর সূচনা লগ্নে মহান আল্লাহ প্রথম নবী হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করেন। নবী আদম (আঃ) এর পাঁজর থেকে ‍সৃষ্টি করা হয় একজন নারীকে। যার নাম হাওয়া (আঃ)। নবী আদম (আঃ) এর জীবন সঙ্গী হিসেবে মহান আল্লাহ তাকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেন। ফলে নবী আদম (আঃ) একাকীত্ব জীবনের অবসান ঘটে। সেই থেকে একজন নারী প্রত্যেকটি পুরুষের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু পুরুষের একাকীত্ব কে দূর করাই নয় বর্তমানে একজন নারী জীবন সংসারে বেঁচে থাকার জন্য এক প্রকার জীবন যুদ্ধ করে যায়।

আমাদের সমাজে নারীকে একসময় ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হোত। একসময় নারী ছিল অবহেলার পাত্রী। তারা শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে ছিল। কিন্তু আধুনিক যুগে এই পিছিয়ে পড়া নারীরাই তাদের যোগ্যতার বলে সদর্পে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো রয়ে গেছে নারীদের বিষয়ে অনেক নেতিবাচক ধারণা। বিশেষ করে জীবনের সব ক্ষেত্রে একজন নারীকে কখনো কখনো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হয়। বিশেষ করে পরিবার ও সমাজে নারীকে অনেক কারণে হেনস্থার স্বীকার হতে হয়। একজন নারীর দোষের কোন শেষ নেই। তাই একজন নারীই যেন সর্বদোষে দোষী।

পরিবারে যখন সে প্রথম জন্ম নেয় তখন তাকে সবচেয়ে বড় প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সবাই চায় ছেলে হয়ে আসুক পৃথিবীর বুকে। মেয়ের নাম শুনলেই যেন সব আনন্দ হারিয়ে যায় সবার। মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে সংসারের কাজ কর্ম না করলে কথা শুনতে হয় প্রতিনিয়ত। সবার মন যুগিয়ে চলাই যেন তার নিত্য দিনের কাজ। একটু এধার ওধার হলে যেন কথার তীরে বিদ্ধ হতে হয় তাকে। স্কুল, কলেজে গিয়ে বখাটের যতন্ত্রণায় যখন জীবন অতিষ্ট তখনও শুনতে হয় চারদিকে মেয়েরই বদনাম। তখনও সেই মেয়েই দোষী। দেরী করে বিয়ে হচ্ছে কেন সে অপবাদের কথাও শুনতে হয় সেই মেয়েকেই। বিয়ের পর শশুড় বাড়ি থেকে নানান চাপ তখনও সেই মেয়েরই দোষ। বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক নিয়ে আসতে পারেনি। ফলে শাশুড়ির অত্যাচার দিন দিন বাড়তে থাকলেও তখনও সেই নারীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। স্বামীর অন্যায় গুলো দিনের পর দিন মুখ বুঝে সহ্য করলেও সেই নারীকেই যেন প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। বন্ধা অথবা ডিভোর্স কিংবা স্বামীর মৃত হলে তার তো কোন কথাই নেই। এ সমাজ সংসার যেন তাকে মানতেই চায় না। ছুড়ে ফেলে দেয় নোংরা ডাস্টবিনের মতো করেই। কর্মস্থান সহ বিভিন্ন জায়গায় একজন নারীকে অসংখ্য বাড় হেনস্থার স্বীকার হতে হয়।

একজন মা সবার সব আবদার পূরণ করেও যেন স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে পারেন না। সবাইকে খুশি রেখেই তার চলতে হয়। কিন্তু সেও যে একজন মানুষ তারও যে খুশি আছে এবং সেও যে সেটা অনুভব করতে চায় সেটা পরিবারের অন্যারা বোঝার চেষ্টা করে না। অনেক টা অবহেলা আর অযত্নে পরিবারের পাশে থেকে নীরবে জীবনের সব সুখ সব আহ্লাস ভুলে গিয়ে পরিবারকে একটা সুন্দর জায়গায় নিয়ে দাড় করান। আর সে সুফলটা সবাই ভোগ করেন। একজন পুরুষ কখনোই পূর্ণতা পান না একজন নারী ব্যতীত। জীবনকে রঙ্গিন ও সুখময় করতে হলে নারীর কোন বিকল্প নেই। সে হতে পারেন মা, হতে পারেন বোন, হতে পারেন ভালোবাসার মানুষ কিংবা স্ত্রী।

একজন নারীর প্রতি সহনশীল আচরণ করা প্রত্যেক টি মানুষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই যে যার অবস্থান থেকে একজন নারীকে আমরা যেন কোন কারণে হয়রানী না করি সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। তার প্রাপ্য সম্মানটুকু যেন আমরা নিশ্চিত করতে পারি সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। একজন নারী কখনোই চায় না তার সুখের সংসারটা ভেঙ্গে যাক। দোষ গুণ নিয়েই মানুষের জীবন। ভুল থাকতে পারে কিংবা ভুল হতে পারে। এটা স্বাভাবিক একটি বিষয়। কাজেই সেখানে কম্প্রোমাইজ থাকতে হবে। ত্যাগ না থাকলে একটি সংসার কিংবা পরিবার টিকে থাকতে পারে না। হয়তো পরিবার নামক শব্দের মধ্যেই পরিবার সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু সত্যিকারের পারিবারিক বন্ধন বিলুপ্ত হয়ে যায়। কাজেই একজন নারীকে আমরা পারিবারিক পলিসি মেকার বলে আখ্যায়িত করতে পারি। যিনি তার দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে একটি পরিবারকে আগলে রাখেন। অনেক ধর্য্য আর সহ্য দিয়ে তিনি সবকিছু মানিয়ে নেয়। যা একজন পুরুষের পক্ষে অনেকটাই অসম্ভব। আমরা যে যার অবস্থান থেকে নারী নির্যাতন সহ তাদের হেনস্থার বিষয়ে আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করি। 

আর তাই আমরা যেন অযথা নারীদের দোষারোপের কেন্দ্র না বানাই। বরং তাদের মন খারাপের পাশে দাড়াই। তাদের কথাগুলো মনযোগ দিয়ে শুনে, বুঝে তারপর তাদের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্তে আসি। একজন নারী ভালোবাসা পেলে সে সত্যিকারে তার ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু আগলে রাখে। আর তাতে অটুট থাকে পারিবারিক বন্ধন। যা যুগ যুগ ধরে আজও টিকে আছে। আমার কাছে একজন নারীই হচ্ছেন সংসার। কাজেই এ সংসারটা টিকিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আসুন আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করি এবং সমাজটাকে বদলাই।