Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

সুশিক্ষা অর্জনে পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাঠশালা

সুশিক্ষা অর্জনে পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাঠশালা


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। পরিবার হচ্ছে আদিম সামাজিক প্রতিষ্ঠান। যুগে যুগে মানুষ তার মাথা গোজার একমাত্র বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার কে পাশে পেয়ে থাকে। পরিবারের মাধ্যমেই একটি শিশু তার শৈশবের সুন্দর মূহুর্তগুলো খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে সক্ষম হয়। এমনকি পরিবারের আশ্রয়ে থেকে মানুষ প্রথম তার হৃদয়ের ভালোবাসা বা মায়া তৈরি করতে সক্ষম হয়। আর তাই পরিবারের এই মায়া কিংবা ভালোবাসা থেকে আমরা আমাদের জীবনের সবকিছু পেয়ে থাকি। এজন্য পরিবারের বাইরে গিয়ে আসলে আমাদের চিন্তা শক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যার্থ হয়ে যায়। তাই পরিবার আমাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জরিয়ে রয়েছে। কেননা সর্বপ্রথম পরিবারের পরিচয়ের মাধ্যমেই একজন মানুষকে ছোট থেকে বড় হতে হয়।

পরিবারের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে ◉ জর্জ স্যান্টায়ানা বলেছেন, পরিবারের বন্ধন হলো সেই শক্তি, যা সব বাধা কাটিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। এ বন্ধন আমাদের পরিচয়, সাহস, ও শক্তির উৎস। পরিবার সম্পর্কে জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক ◉ হুমায়ূন আহমেদ জানিয়েছেন, পরিবার হলো সেই স্থান, যেখানে আমরা যেমনই হই না কেন, ভালোবাসা পাই। যেখানে নিজের সকল কষ্ট ভাগ করে নেওয়া যায়। ◉ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বলেছেন, পরিবার হলো মনের বাগান, যেখানে ভালোবাসা, সহানুভূতি আর সহমর্মিতা প্রতিদিন ফোটে। এ বাগানে আগলে রাখলে তবেই সে ফুলের মতো সৌরভ ছড়ায়। এছাড়া পরিবার সম্পর্কে ◉ ব্রায়ান হার্বার্ট গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে জানান, পরিবারই আমাদের প্রথম বিদ্যালয়, যেখানে আমরা ভালোবাসা, সম্মান আর মানবিকতার পাঠ শিখি। পরিবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে অবেলার ডাক সম্পাদক ◉ মোঃ রিসালাত মীরবহর মন্তব্য করেন, পরিবার হচ্ছে একটি শিশুর জন্য প্রথম পাঠশালা, যেখানে তার সত্যিকার অর্থে সুন্দর কিছু শেখার রয়েছে।
 
তাই একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, পরিবার আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমাদের মাঝে জড়িয়ে আছে। আসুন আমরা একটু বুঝতে শিখি আসলে পরিবার আমাদের জীবনে সেই ছোট থেকে বড় অবদি কি কি অবদান রাখছে। প্রথমেই আমরা অতি যত্নে ছোট থেকে বড় হতে থাকি। সবার আদর, ভালোবাসা ও যত্নে বেড়ে ‍উঠি। এছাড়া আমাদের প্রাথমিক সহ সকল চাহিদা পরিবারের মাধ্যমে পূরণ করে থাকি। বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, বিনোদন সহ জীবনের সবকিছুই পরিবারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। এছাড়া একটি শিশুর আচার ব্যবহার কেমন হবে? তার কাজগুলো কেমন হবে তা অনেকাংশে নির্ভর করে পরিবারের উপর।

বর্তমানে আমাদের প্রজন্মের একাংশ পরিবারের বাইরে গিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো তাদের ইচ্ছায় জীবন পরিচালনা করতে অনেকটাই অগ্রসর ভূমিকায় অবতীর্ণ রয়েছে। যা পারিবারিক অশান্তি তৈরিতে বেশ ভূমিকা পালন করছে। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় এসকল কিশোর বা কিশোরী তাদের পরিবারের বাধ্যবাধকতার বাইরে গিয়ে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। যা সামাজিক ভাবে ঐ পরিবারকে অনেকটাই হেয় করছে। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের অবাধ মেলামেশা, মাদকাসক্ত, জুয়ার আড্ডা, কিশোর গ্যাং, ইভটিজিং এর মতো বিষয়গুলো বেশ ভয়াবহ পরিস্থিতির তৈরি করছে। যা আমাদের সমাজের বিশৃঙ্খলা তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত তারা তাদের পরিবারের সঠিক দিক নির্দেশনায় বেড়ে উঠতে সক্ষম হয়নি অথবা তাদের বাবা-মা তাদের সঠিক শিক্ষা দিতে ব্যার্থ হয়েছে। 

যেখানে সুন্দর সুশিক্ষা নিয়ে শিশুর বেড়ে ওঠার কথা সেখানে এসব তরুণ-তরুণীরা জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন ছোট-বড় অপরাধ কিংবা অপকর্মে। আর এসস অপরাধের পিছনে বেশকিছু বিষয় রয়েছে যা এসব তরুণ-তরুণীদের বিপথগামী করতে অনেকটা সাহায্য করছে। বিশেষ করে বাবা-মায়ের সাথে মনমালিন্য, সন্তানদের সঠিক তদারকির অভাব, সন্তানদের সুশিক্ষা দিতে ব্যার্থতার পরিচয়, এছাড়া ছিন্নমূল শিশুদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান তৈরি করতে না পারা, সন্তানদের অধিক ভালোবসতে গিয়ে তার সব দাবীগুলোকে মেনে নেওয়া, ভালো মন্দের বিষয়ে সন্তানদের সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান না করা, মাদকের সহজলভ্যতা, বন্ধুদের সাথে অতিরিক্ত সময় দেওয়া, নৈতিক শিক্ষার অভাব, কর্মসংস্থানের অভাব। এছড়া অপরিপক্ক বয়সে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হওয়ার বিষয়টিও তাদের কোন কোন দিক থেকে বিপথগামী করে তুলছে।

যে পরিবারটি সন্তান নিয়ে উল্লেখিত সমস্যা নিয়ে ভুগছেন সেই পরিবারটি জানেন এসব সমস্যাগুলো আসলে কতটা প্রকট বা ভয়াবহ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে এর সমাধান কোথায়? দেখুন আপনি যতবড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আপনার সন্তান কে পড়াশুনা করান না কেন, সে যদি সত্যিকারের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হয় তবে তার কোন শিক্ষা জীবনে সত্যিকারে ভালো কোন কাজে আসবে না। নৈতিক শিক্ষা বলতে আমি সেই শিক্ষাকে বোঝাতে চাইছি যে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন মানুষ তার বিবেক কে জাগ্রত করতে সক্ষম হবে। যে তার নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মনুষ্যত্বকে গ্রহণ থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। একটি মানুষের বড় হওয়া বলতে আমরা বুঝি অগাধ টাকা-পয়সা, গাড়ী, বাড়ি, ধন-সম্পত্তি ইত্যাদি। আসলে কি বড় হওয়ার সংজ্ঞা এটা? 

জীবনে বড় হওয়া বলতে তাকে বুঝায় যে ভাবে বড় হলে মানুষ মানুষের জন্য কাজে আসবে। দেশ ও দশের কল্যাণে আসবে। কিন্তু আমাদের সন্তান যদি মাদকাসক্ত অথবা কিশোর গ্যাং এর সাথে জড়িত থাকে তবে সেই সুন্দর মানুষ তৈরির যে স্বপ্ন সেটা কল্পনা ছাড়া আর কিছুই না। কারণ যদি  তাদের সঠিক সুশিক্ষা দেওয়া না হয় তবে তারা জীবনের স্বাভাবিক ছন্দপতনের দিকে ধাবিত হবে। ফলে আমাদের সবকিছু দিয়েও সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে না পারাটা আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা হিসেবে জায়গা করে নেবে। তাই সন্তানের স্বাভাবিক জীবনের সুন্দর আয়োজন থেকে বিচ্যুত হওয়ার ঘটনায় পরিবারের দায়বদ্ধতা সবচেয়ে বেশি। কারণ পরিবার হচ্ছে একটি সন্তানের সুশিক্ষার জন্য প্রথম পাঠশালা। যে পাঠশালা থেকে সে ভালো কিছু শিখবে এবং পরবর্তী জীবনে সে তার সুশিক্ষা প্রয়োগ করবে। যাতে করে ভবিষ্যতে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্র তার এই সুশিক্ষার সুফল ভোগ করবে।

আসুন সন্তানকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে তার সাথে সবসময় ভালো আচরণ করি। তার খারাপ দিকগুলোকে প্রথমেই চিহ্নিত করে সে বিষয়ে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করি। তাকে বিভিন্ন সামাজিক কার্মকান্ডে উৎসাহ প্রদান করি। তার সাথে সরাসরি বিভিন্ন বিষয়ে স্বাভাবিক ভাবে আলাপ আলোচনা করি। তার মনকে বোঝার চেষ্টা করি। বাবা-মা হিসেবে তার আনন্দ গুলোকে সেভাবে আমরা দেখি, ঠিক একই ভাবে তার কষ্ট বা দুঃখ গুলোকেও সুন্দর ভাবে মূল্যায়ন করি। তাকে অতিরিক্ত শাসন করা থেকে বিরত থাকি। বিশেষ করে বাবা-মা হিসেবে তার শাসক না হয়ে বরং একজন ভালো আন্তরিক বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করি। তাকে বিভিন্ন সৃজনশীল সাহিত্য চর্চায় উৎসাহ যোগাই যেখানে সে সত্যিকারের ভালো কিছু জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হবে। তাকে ভালো বই পড়তে উৎসাহ যোগাই। পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা করি।

তাকে গুরুত্বহীন ভাবা আমাদের উদ্দেশ্য নয় বরং তাকে আগামীর ভবিষ্যতের একজন সত্যিকারের সুন্দর সুখী সমৃদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করি। আমরা সুন্দর একজন মানুষ দেখতে চাই যাকে দেখে সবাই মুগ্ধ হবে। যাকে সবাই অনুসরণ করতে চাইবে। কিশোর গ্যাং কিংবা মাদক নয় বরং তাদের জ্ঞান আমাদের কে নিয়ে যাবে বহুদূরে। যেখানে সবাই দাড়িয়ে তাকে হাত তালি দিয়ে অভিবাদন জানাবে। হাজারো মানুষের মাঝে সে হবে আলাদা একজন মানুষ। যে হবে অনন্য গুণের অধিকারী। যাকে দেখে সবাই পরম আনন্দিত হবে। সুন্দর হোক এই পৃথিবী, সুন্দর হোক আমাদের সকল চিন্তা। বয়ে আসুক ধরণীর বুকে শান্তির সুবাতাস। যে বাতাসে আমরা সবাই হবো একে অপরের আপন। আসুন আমাদের সন্তানকে সুশিক্ষায় বড় করি। আর বয়ে আনি পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য গৌরব।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)

☛ আমাদের অনলাইন শপে ভিজিট করুন: OBALARSHOP