Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলে বেকারত্ব আরও বাড়বে: মোঃ রিসালাত মীরবহর

কর্মসংস্থানের সুযোগ

মোঃ রিসালাত মীরবহর।। একটি দেশের মেরুদন্ড হচ্ছে তরুণরা। তারাই আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎত। তরুণদের মেধার উপর ভর করেই এগিয়ে নিতে হবে দেশকে। আজকের তরুণ আগামীদিনের কান্ডারী। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তরুণদের কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে করে তাদের বেকার সমস্যার সমাধান করা যায়। যত বেশি তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে তত বেশি দেশ এগিয়ে যাবে। কারণ বেকারত্ব শুধুমাত্র বেকারত্ব না। এই বেকারত্বের সাথে জড়িয়ে আছে হাজারো সমস্যা। কর্মহীন একজন মানুষের জীবন খুবই অভিশপ্ত। যা একজন বেকার তরুণ ছাড়া আর কেউ বুঝবে না।

প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য তরুণ-তরুণী পাশ করে বের হচ্ছে। যে হারে তারা পাশ করে বের হচ্ছে সেই হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। অর্থাৎ কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই ক্ষীণ হয়ে আসছে। একজন শিক্ষার্থীর প্রাইমারী পাশ করতে ৫ বছর চলে যায়, মাধ্যমিকে আরও ৫ বছর। এস.এস.সি তে ২ বছর আর অনার্স করতে ৫-৬ বছর। বয়স যখন ৩০ ছুই ছুই তখন তাকে পড়তে হয় চাকরির নানা জটিলতায়। এতো এতো পড়াশুনা এতো এতো সার্টিফিকেট থাকতেও তখন যেন নিজেকে নিজের কাছে মনে হয় নির্বিকার। তাকে চাকরির জন্য ঘুরতে হয় এক অফিস থেকে আরেক অফিস। কেননা ভালো মেধা আর সনদ থাকলেই মিলছে না ভালো চাকুরি।

প্রাইভেট কোম্পানির দরজায় চাকুরির জন্য গেলে তারা জানিয়ে দেয় অভিজ্ঞতা আছে কিনা? আজকের তরুণরা যাবে কোথায়? অভিজ্ঞতা যদি অর্জন করতে যায় তবে শিক্ষা গ্রহণে ব্যাঘাত ঘটবে। আবার উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে গেলে বয়স চলে যাবে। দেশে প্রচুর মেধাবী তরুণ আছে যারা বেকারত্বের ঘানি টেনে আজ ক্লান্ত। আবার আপনি যদি চান শুধুমাত্র মেধাবীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবেন তবে সমস্যা রয়েই যাবে। কারণ সবার জ্ঞান কিংবা মেধা একরকম নয়। যাদের মেধা নেই তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করে আপনি দেশের বেকারত্ব সমস্যার সমাধান খুজে পাবেন না। সামগ্রিক ভাবে সবাইকে কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বেকাত্বের সাথে হাজারো সমস্যা জড়িত।

আজকে আমরা যখন দেখি তরুণরা বিপথগামী হচ্ছে তখন আমরা তাদের নিয়ে নিন্দা করতে মোটেই ছাড়ি না। কিন্তু তার এই বিপথগামীতার পিছনে সবার দায় আছে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বপরি সে নিজেও। একটি দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য অনেকগুলো মৌলিক বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখতে হয়। বিশেষ করে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈকি স্থীতিশীলতা থাকাটা খুবই জরুরী। স্বচ্ছতার অভাব, জবাবদীহিতার অভাব, দলীয়করণ, আইনের সু-শাসন প্রতিষ্ঠা কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বের হতে না পারলে সে ধাক্কা গিয়ে লাগে তরুণদের কর্মসংস্থানের উপর। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকার আন্দলনের মুখে পড়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দেন। অথচ তরুণদের জন্য সেই পরিমাণ কর্মসংস্থান তৈরি হয় না। একজন তরুণ বা তরুণী যদি একটি কর্মসংস্থানের সুযোগ খুজে পায় তবে তার মাধ্যমে ঐ পরিবারটি বেঁচে থাকতে পারে। সে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে পারে।

বিভিন্ন পরিচিত মানুষের তদবিরের মাধ্যমে চাকুরির ব্যবস্থা হয় অনেকের। যাদের মধ্যে অনেকেই অদক্ষ থাকে। অথচ যার তদবির করার মতো লোক নেই সে দক্ষ হয়েও পড়ে থাকে বেকারের মতো। অনেকেই এখন দেশে ছেড়ে বিদেশে পারি জমাচ্ছে কাজের খোজে। কেউ কেউ দালাল ধরতে গিয়ে হারাচ্ছে তার শেষ সম্বলটুকু। ফলে রাস্তায় গিয়ে দাড়াতে হচ্ছে সেই পরিবারকে। আবার মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকেই না পাচ্ছে চাকুরি আর না পারছে দিনমজুরী খাটতে। সব মিলিয়ে দিন দিন দেশে বেকারত্বের বোঝা তৈরি হচ্ছে। পূর্বে বাবা-মায়ের কাছ থেকে শুনেছি মেট্রিক পাশ করলে নাকি সেই শিক্ষার্থীকে সবাই বাড়িতে দেখতে যেত। আর এখন উচ্চ শিক্ষিত একজন তরুণকে চাকরি করতে হয় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে।

দক্ষতা ও শিক্ষা থাকতেও অনেকে হয়রানীর শিকার হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। বেতনের বাড়তি কাজ করিয়ে নেওয়ারও অভিযোগ নেহাত কম নয়। অন্যদিকে কিছু কিছু ভুয়া প্রতিষ্ঠানে লোক নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিচ্ছে সহজ সরল তরুণদের কাছ থেকে ভালো অংকের টাকা। আবার কেউ কেউ নিয়োগের নামে খাটিয়ে নিচ্ছে এসব তরুণদের ১-৬ মাস। কিন্তু বেতন দেওয়ার সময় করছে প্রতারণা। দেখার কেউ নেই, যেন অন্যায়ের স্বর্গরাজ্যে আমাদের বসবাস। এসব ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে অচিরেই অসংখ্য তরুণ-তরুণী হারাবে তাদের সর্বস্ব।

শুধু শিক্ষা আর সনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে দেশের বেকাত্ব মোকাবেলা করা যাবে না। তৈরি কারতে হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। প্রয়োজনে প্রতিটি বিভাগে মানসম্মত চাহিদাভিত্তিক কর্মদক্ষতা উন্নয়ন কর্মশালা আয়োজনের মধ্যদিয়ে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে তরুণ-তরুণীদের। যেখানে সকল তরুণ-তরুণীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এখন প্রচুর সনদ আছে কিন্তু চাকুরি নেই। তাহলে সে সনদ দিয়ে কি হবে? কি হবে সে শিক্ষা দিয়ে যে শিক্ষা দু’বেলা আহার জোটাতে পারে না। প্রয়োজন বাস্তবমূখী শিক্ষাব্যবস্থা। বইয়ের পৃষ্ঠায় আমি দুনিয়ার সব পড়লাম। আমার সব সনদে ভালো ভালো রেজাল্ট। অথচ যখন ইন্টারভিউ দিতে গেলাম তখন চইলো অভিজ্ঞতা। এটা আমি মনে করি একজন বেকার তরুণদের সাথে তামাশা ছাড়া আর কিছু না। হয় কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হোক না হয় সনদ ভিত্তিক। দু’টোর যেটাই চালু হোক না কেন চাই বেকারত্ব সমস্যার সমাধান।

আমার দেশের বেকার সমস্যার কারণে বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে এদেশের হাজারো মেধাবী তরুণ। যারা দেশের অর্থনীতিতে ব্যপক ভূমিকা পালন করতে পারতো। শুধু তাই নয় বেকার সমস্যার কারণে অনেক তরুণকে শিক্ষার বিষয়ে অনাগ্রহী করে তুলছে। ফলে সামগ্রিক ভাবে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। দেশের ব্যবসা বাণিজ্যকে পরিবেশ বান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে সবাই বিনিয়োগ মূখী হয়। প্রয়োজনে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে তাকে বিনা সুদে সরকারি বা বেসরকারী উদ্যোগে সহায়তা করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। নতুন নতুন কল-কারখানা ও শিল্প-প্রতিষ্ঠান তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে গিয়ে যেন কেউ হয়রানীর স্বীকার না হয় সে দিকে নজর দিতে হবে।

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে দেশের বেকারত্ব নিরসনে। স্লোগন হবে একটাই “কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না”। সবাইকে নিয়েই মিলেমিশে সুন্দর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে হলে বিদেশে টাকা পাচার রোধ করতে হবে। দেশের সকল ব্যাংক ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বেচ্ছাচারীতা, পরিবারতন্ত্র, তদবির ব্যাবস্থা, ঘুষ বাণিজ্য, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ হতে দেশকে যদি রক্ষা করা যায় তবে অনেকাংশে দেশে বেকারত্ব কমে আসবে। শুধু তাই নয় তরুণদের কর্মসংস্থান তৈরি হলে মাদকাসক্ত, অপরাধ, বিবাদ, হানাহানি, মারামারি সহ অনেক অন্যায় থেকে সবাই মুক্তি পাবে।

আসুন একজন বেকার তরুণের পাশে দাড়াই। যার যে সাধ্যমতো অন্তত একজন তরুণের জন্য একটি কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃষ্টি করে দেই। যাতে করে সে তার পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারে, একটু ভালো ভাবে বাঁচতে পারে। আমরা চাই সুন্দর পৃথিবী। যে পৃথিবীতে থাকবেনা কোন বেকারত্ব, দারিদ্রতা কিংবা ক্ষুধা। আজকের তরুণ আগামী দিনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাই তার পাশে দাড়িয়ে নিজেকে করি অনন্য।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)

☛ আমাদের অনলাইন শপে ভিজিট করুন: OBALARSHOP