মোঃ রিসালাত মীরবহর।। আসসালামু আলাইকুম। ‘অবেলার ডাক’ সবার জন্য সাহিত্য ম্যাগাজিনের সকল লেখক ও পাঠকদের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের লেখা। প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ‘অবেলার ডাক’ ম্যাগাজিনের সকল গুণী ও সম্মানিত সকল কবি/সাহিত্যিক, পাঠক/পাঠিকা, লেখক/লেখিকা ও প্রতিনিধিদেরকে। যারা দূর দূরন্ত থেকে ‘অবেলার ডাক’ সবার জন্য সাহিত্য ম্যাগাজিনে লিখে যাচ্ছেন। নবীন একজন সম্পাদক হিসেবে এটা আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। ‘অবেলার ডাক’ কেবলমাত্র একটি ম্যাগাজিনই নয় বরং এটি হচ্ছে লেখক ও পাঠকদের একটি মিলন মেলা। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা আমাদের ম্যাগাজিনটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আমি সকল লেখক ও পাঠকদের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
একটি সৃজনশীল সাহিত্য চর্চার মাধ্যম হিসেবে ইতোমধ্যে সবার কাছে ‘অবেলার ডাক’ হয়ে উঠেছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘অবেলার ডাক’ সবার জন্য সাহিত্য ম্যাগাজিনটিকে আরও উন্নত ও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সময় গঠনমূলক পরামর্শ ও মতামত প্রদান করে থাকেন। আপনাদের এমন পরামর্শ ও মতামত পেয়ে সত্যিই আমি অত্যন্ত আনন্দিত। কারণ আপনাদের এমন পরামর্শ ও সুচিন্তিত মতামত ‘অবেলার ডাক’ ম্যাগাজিনকে কে আরও বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের সকলের। আজ ‘অবেলার ডাক’ আপনাদের সবার একটি প্রিয় ম্যাগাজিন। তথ্য প্রযুক্তির এই দুনিয়ায় বই পড়া অনেকের সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন, একটি ভালো বই শুধু একটি ভালো বন্ধুই নয় বরং একটি ভালো বই জীবনের নানা সিদ্ধান্তগুলোকে সুন্দর করার বিষয়ে আমাদের আগ্রহী করে তোলে। ফলে একজন মানুষ হয়ে ওঠে অত্যন্ত মার্জিত, ভদ্র, বিনয়ী, জ্ঞানী ও বিবেকবান।
জীবনকে সুন্দর করে তুলতে একটি ভালো বইয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই অনেক মনিষীরা তাদের ভাবনায় বলে গেছেন, বই হচ্ছে মনের খোরাক। জীবনের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে চলার পথে বই আমাদের জ্ঞানকে কেবল প্রসিদ্ধই করেনা বরং জীবনের অনেক জটিল ও কঠিন সিদ্ধন্ত গ্রহণে বেশ সহায়তা করে। জীবনকে করে চিন্তামুক্ত ও আনন্দময়। জীবনকে সুন্দরভাবে উপভোগ করতে গেলে একটি ভারো বইয়ের তুলনা নেই। তাই একজন লেখক হিসেবে আমাদের অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে যে কোন মাধ্যমে লেখা পাঠানোর পূর্বে সেই লেখা ভালো ভাবে পড়ে নিতে হবে, যাতে করে এর ভুলগুলো সম্পর্কে আমরা ভালোভাবে অবগত হতে পারি। এছাড়া কোথায় দাড়ি, কোথায় কমা কিংবা সেমিকোলন ব্যবহার করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে দক্ষ হতে হবে।
একটি লেখাকে সুন্দর রূপ দিতে লেখাটি পূর্ণতা পেল কিনা সে বিষয়েও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। অর্থাৎ লেখাটি পাঠক প্রিয়তা পেতে অবশ্যই তা হতে হবে সরল, সাবলিল ও সহজ বোধগম্যতা। যা একজন পাঠককে লেখার প্রতি আকৃষ্ট করবে। আমরা অনেকেই কবিতা লিখি। কিন্তু তা অনেকগুলো লাইন করে ফেলি অথবা শব্দগুলোকে দীর্ঘ করে ফেলি অথচ খুব কম লাইনের মধ্যেও আপনি পাঠকের মনে একটি বার্তা দিয়ে পাঠক প্রিয়তা অর্জন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে একটি কবিতা ১৬ লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে তা খুবই চমৎকার হতে পারে। আবার আমরা অনেকেই আছি যারা কবিতা লিখতে গিয়ে এমন কিছু শব্দ ব্যবহার করি যার অর্থ বুঝতে হয়তো পাঠকের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। যা পাঠক কে সেই লেখা পড়তে অনাগ্রহী করে তোলে। তাই লেখক হিসেবে আপনি তখনই সফল হবেন, যখন আপনার লেখার দ্বারা পাঠক উপকৃত হবে কিংবা সে আপনার লেখার মাঝে আনন্দ খুজে পাবে। ফলে সে আপনার লেখা খুজে পড়তে আগ্রহী হবে।
আমরা অনেকেই ই-মেইল করে লেখা পাঠাই। কিন্তু সে ই-মেইলের বিষয়বস্তু লিখি না কিংবা লেখাটির শেষ অংশে লেখকের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর লিখতে ভুলে যাই। ফলে লেখাটি পাওয়ার পরেও অপ্রকাশিত থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায় বহুলাংশে। এছাড়া লেখা আহ্বানের নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই যেন লেখাটি আমরা ই-মেইলের মাধ্যমে সম্পাদক মহোদয়ের নিকট পৌছে দিতে পারি, সে বিষয়ে আগে থেকেই সতর্ক হতে হবে। একজন সত্যিকারের লেখক তার মনের মাধুরি দিয়ে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন বিষয়ে লিখতে পারেন। সেটা অবশ্যই একজন লেখকের জ্ঞান ও দক্ষতার ফলস্বরূপ। কিন্তু আমাদের মধ্যে কিছু সংখ্যক আছি যারা অনলাইন থেকে কপি করে হুবহু লেখা পাঠাই। একজন দক্ষ লেখক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার জন্য এগুলো বর্জন করাই মনে হয় শ্রেয়।
একটি লেখাকে কিভাবে অর্থবহ করে তোলা যায় এবং তা কিভাবে পাঠক প্রিয়তা পেতে পারে তা যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি, তবে তা লেখনির সৌন্দর্য্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে বেশ সহায়তা করে। লেখা হচ্ছে একটি চর্চা। আমরা যত লিখতে পারবো আমাদের লেখনি দক্ষতা তত বৃদ্ধি পাবে। একজন চিত্র শিল্পী যেমন একটি চিত্র কর্ম আকঁতে গিয়ে তার মনের মধ্যে চিত্রটিকে সুন্দর করার ভাবনায় কল্পনার জগতে হারিয়ে যায়, ঠিক তেমনি একজন লেখক কে একটি বিষয় সম্পর্কে লিখতে গেলে তার মনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে সুন্দর ভাবনার প্রয়োজন পড়ে। চিত্রশিল্পী তার চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তুলেন তার হাতে থাকা রংতুলি দিয়ে যা মানুষ দেখতে পায় চোখ দিয়ে, তেমনি একজন লেখক কল্পনা করেন মন থেকে, যা পাঠক পড়তে পারে তার জ্ঞানের আলো দিয়ে। লেখক জ্ঞান দেন, আর পাঠক সে জ্ঞান গ্রহণ করেন। কিন্তু বর্তমানে আমাদের পাঠক সংখ্যা সন্তোষজনক নয়। কারণ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার কারনে পাঠকরা হারাতে বসেছে। তাই নতুন নতুন পাঠক তৈরি করতে লেখকদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তাদের জ্ঞান দ্বারাই পাঠকের মনে জায়গা করে নিতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন লেখক কে পাঠক মন থেকে তখনই খুজবে যখন ঐ লেখকের লেখনি দ্বারা পাঠক সত্যিকারে ভালো কিছু খুজে পাবে। কারণ একজন পাঠকও কখনো কখনো লেখক হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে। আর পাঠককে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে গেলে অনেক বই পড়তে হয়।
কেননা অনেক বই পড়ার মাধ্যমে সে জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হয়। ফলে সে আরও বেশি লেখক হতে উৎসাহি হয়ে ওঠে। তাই একজন লেখককে তার লেখার বিষয়ে যথেষ্ট যত্নশীল হওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে তার লেখা সহজ, সবালিল, পাঠক বোধগম্য কিনা সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এাছাড়া লেখকের লেখায় শব্দের শৃঙ্খলা, শুদ্ধ বানান কিংবা দাড়ি, কমা ঠিক রয়েছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। তাই আমরা একথা বলতেই পারি, সাহিত্য চর্চাকে নিয়ে যেতে হবে শিল্পীর রং তুলিতে আঁকা অনন্য সুন্দর চিত্রের মতো করে। পাঠক যতই দেখবে, ততোই তার পড়তে মন চাইবে। আর তাতে করে লেখক আর পাঠকের মাঝে তৈরি হবে একটি অনন্য সুন্দর সেতুবন্ধন।
বাংলা সাহিত্যকে প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ করতে যুগে যুগে বহু গুণীব্যাক্তি, বিখ্যাত সব কবি, লেখক ও গবেষকরা বিভিন্ন ভাবে কাজ করে গেছেন। যা আজও নদীর মতোই বহমান রয়েছে। তাদের এসব অবদানকে বাংলা সাহিত্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলা সাহিত্যকে আরও প্রসার ও সমৃদ্ধ করতে আমাদের ‘অবেলার ডাক’ সবার জন্য সাহিত্য ম্যাগাজিন কাজ করে যাচ্ছে। যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাম না জানা অবহেলিত অসংখ্য লেখক, কবিকেও যেন একজায়গায় এনে তাদের মনের সব সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদন, হাসি-কান্না ও আনন্দকে সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে পারে। আজ আর নয়। সবার সুস্বাস্থ্য ও ভালো থাকা প্রত্যাশা করে আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহ্ হাফেজ।
Mobile: +88 01516332727 (What's App)