মোঃ রিসালাত মীরবহর।। একটি সমাজের মেরুদন্ড হচ্ছে তরুণরা। কারণ তরুণরাই পারে সমাজকে পরিবর্তন করতে। তরুণদের হাত ধরেই সমাজ তার বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাগুলোকে সমৃদ্ধ করতে সচেষ্ট হয়। এক কথায় তরুণদের ছাড়া সামাজিক অগ্রগতি সম্ভব নয়। আর তাই এসব তরুণদের কে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই সত্যিকারের কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা। জ্ঞান-বিজ্ঞান, সামাজিকতা, নৈতিকতা, সাহিত্যমনা, বাস্তবমূখী শিক্ষাক্রম সহ বিভিন্ন শাখায় তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে- ‘তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ’। আর তাই শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, জ্ঞান-বিজ্ঞান সহ সকল শাখায় তাদের অবাধ বিচরণ থাকতে হবে। উন্নত বিশ্বের সাথে প্রতিযোগীতা মূলক ধারা অব্যাহত রেখে এগিয়ে যেতে হবে দেশ মাতৃকার জন্য।
বেকারত্ব একটি অভিশাপ। এটি একটি তরুণের জীবনের জন্য ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন করে। বিশেষ করে পারিবারিক ও সামাজিক ভাবে বৈষম্যের স্বীকার হয়। একটি তরুণ কে তার অধ্যায়নের পর্ব সমাপ্ত করার পর চাকরির জন্য ঘুরতে হয়। পারিবারিক চাপ ও সামাজিক সম্মান বিনষ্টের কারণে তাকে কোনঠাসা অবস্থায় পড়তে হয়। দেশে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীর সংখ্যা অগনিত। সে তুলনায় কর্মসংস্থান খুবই অপ্রতুল। ফলে তরুণদের মধ্যে ব্যাপক হতাশা বিরাজ করছে। বিশেষ করে পড়াশুনার পর্ব শেষ করার পর চাইলেই জুটছেনা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরী। ফলে এসব তরুণ দিন দিন সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে যাচ্ছে। বাড়ছে অর্থনৈতিক চাপ। অথচ তরুণরাই একটি রাষ্ট্রের কান্ডারী।
উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে তরুণদের বোঝা হিসেবে দেখা হয় না। কারণ তাদের কে মনে করা হয় অর্থনীতির চালিকা শক্তি। এর কারণ তরুণদের কে বাস্তবমূখী শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে গড়ে তোলা হয়। ফলে তাদের বেকারত্ব পেয়ে বসে না। অন্যদিকে আমাদের দেশে কর্মমূখী শিক্ষার পরিবর্তে সনদ কে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অর্থাৎ যে যত শিক্ষিত সনদ প্রদর্শন করতে সক্ষম সে তত বড় চাকুরি করতে সুযোগ পায়। ফলে শিক্ষার এই মানদন্ডে চাকুরির ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি হয়। কেউ চাকুরি পায় আবার কেউ বেকার জীবন কাটায়। অথচ একবার ভাবুন যাদের কে আমরা তৈরি করছি তাদের যদি সত্যিকারের কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা যায় তবে কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য যেমন দূর হয় ঠিক তেমনি বেকারত্বও লাঘব হয়।
পূর্বের তুলনায় অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। অধিক সংখ্যক বেকারত্বের কারণে তরুণ-তরুণীরা এখন নিজে থেকেই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী হচ্ছে। কারণ চাকুরী একটি স্বচ্ছল জীবন উপহার দিতে পারছেনা। তাছাড়া কর্মক্ষেত্রে দিন দিন বৈষম্য বাড়ছে। কাজ অনুযায়ী পারিশ্রমিক তেমন বাড়ছে না। অথচ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সেদিক দিয়ে বিবেচনা করলে একজন তুরণ উদ্যেক্তা নিজে যেমন স্বচ্ছল হচ্ছে অন্যদিকে আরও অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছে। তাই আপনি কোন বিষয়ে উদ্যোক্তা হলেন তা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকেনা। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে আপনি একজন উদ্যোক্তা। যে কিনা নিজের বেকারত্ব লাঘবের পাশাপাশি অন্যদের বেকারত্ব দূর করতে সক্ষম।
বেকারত্বের কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ধরুন আপনার পকেটে পয়সা নেই। আপনি ক্ষুধার্ত। একটি নির্দিষ্ট সময় পরেও যদি আপনার আর্থিক অবস্থা একই রকম থাকে তবে তখন আপনি কি করবেন? উত্তরটা হয়তো আমরা অনেকেই অনুমান করতে পারি। বেকারত্বের সাথে সামাজিক অবক্ষয়ের বিষয়টি অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। উদাহরণ স্বরূপ আমার কাছে যদি টাকা থাকে তবে আমি কখনই আপনি কখন আমাকে চা খাওয়াবেন সে অপেক্ষায় থাকবো না। কিন্তু যদি এমন হয় যে আমার কাছে টাকা নেই তখন কিন্তু বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি আপনার টাকার চা খাওয়ার জন্য অপেক্ষায় থাকবো। এই যে নির্ভরশীলতার একটি বিষয় এটা বিভিন্ন ভাবে মানুষের উপর চাপ তৈরি করছে। সেটা পারিবারিক ভাবেই হোক আর সামাজিক ভাবেই হোক।
অথচ যদি একটি তরুণ তার যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থান পায় তবে তার কারও উপর নির্ভরশীল হতে হয় না। বেকারত্বের কারণে বিভিন্ন রকম সামাজিক অবক্ষয় পরিলক্ষিত হয়। যেমন: মাদকের বিস্তার, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানি, রক্তপাত সহ নানা সামাজিক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু একজন তরুণ যদি বেকার না থেকে তার একটি কর্মসংস্থান হয় তবে সে কখনো বুঝে শুনে এসব সামাজিক অবক্ষয়ের মধ্যে অংশগ্রহণ করবে না। তখন তার ধ্যান কিংবা জ্ঞান থাকবে ক্যারিয়ার কিভাবে আরও ডেভলপ করা যায়। এই জায়গাটাতেই মূল বিষয় আমরা কাগজের একটি সনদ দিয়ে আমাদের শিক্ষার মাপকাঠি তৈরি করছি। অথচ এটা না করে যদি আমরা বাস্তবমূখী শিক্ষা গ্রহণ করতাম তবে যে কোন একটি জায়গায় অন্তত রুজী-রোজগারের ব্যবস্থা হতো।
কিছুদিন আগে দেখলাম নিজের তৈরি প্লেনে আকাশে উড়ছে মানিকগঞ্জের অজপাড়া গাঁয়ের এক যুবক, যার নাম জুলহাস মোল্লা। পেশায় ইলেট্রিক মিস্ত্রী। অথচ ‘আলট্রা লাইট (আরসি)’ মডেলের একটি বিমান তৈরি করে চমক দেখালেন। ও আচ্ছা বলাই হয়নি তার শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে সংসারের অর্থাভাবে ২০১৪ সালে মাধ্যমিকেই থেমে যায় তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। এরকম হাজারো মেধাবী রয়েছে আমাদের দেশে। আমরা তাদের কে সম্পদে পরিণত করতে পারছি না। কারণ ঐ সনদ। সনদ নাই তার মানে হচ্ছে আপনার কিছু নাই। আচ্ছা জুলহাস যদি মাধ্যমিকে পড়ে ‘আলট্রা লাইট (আরসি)’ মডেলের একটি বিমান তৈরি করতে পারে যা কিনা চীনারা ব্যবহার করে। তবে আমাদের দেশে যে সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং সেখানে যারা অধ্যায়ন অবস্থায় আছে তাদের কাছ থেকে আমরা কি ধরনের আবিস্কার প্রত্যাশা করি?
আচ্ছা একজন বেকার তরুণের কথাই ধরুন। সে বি.এ পাশ করলো। খুব সাধারণ একটি ডিগ্রী। বই পড়েছে গাদা গাদা। পৃষ্ঠায় যা লেখা ছিল সেটুকুই বুঝেছে কিংবা তার মধ্যে থেকে লিখেছে, পাশও করেছে। কিন্তু এই যোগ্যতা কি তাকে একটি সুন্দর জীবিকা নির্বাহের হাতিয়ার তৈরি করতে পেরেছে, পারেনি? কারণ তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হওয়ার পরে সরকারি চাকুরীর বয়স প্রায় শেষ। আর কোম্পানির চাকুরিতে জানতে চাচ্ছে তার অভিজ্ঞতা আছে কিনা? তো তার সনদ দিয়ে কি হবে? আমার তো মনে হয় এই সমস্যা হাজারো তরুণ-তরুণীর। অথচ ধরুন সে যদি বাস্তবমূখী শিক্ষায় শিক্ষিত হতো যেমন: যদি তাকে গাড়ি চালনা শিখানো হোত কিংবা গাড়ি সাভিসিং অথবা ইলেকট্রিশিয়ান বা অন্যকোন বিষয়ে তাকে যদি দক্ষ করে গড়ে তোলা হোত তবে সে কখনো বেকার থাকতো না। সে তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিশ্চই কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে পারতো।
আমার কাছে উচ্চশিক্ষা শেষ কথা নয়। জুলহাসের মতো একজন মাধ্যমিক পড়ুয়া তরুণ যখন ‘আলট্রা লাইট (আরসি)’ মডেলের একটি বিমান তৈরি করতে পারে তখন এদেশের হাজারো যুবক স্বপ্ন দেখে ঘুড়ে দাড়াবার। দেশে প্রচুর বেকার মেধাবী তরুণ-তরুণী রয়েছে যাদের আমরা বোঝা না ভেবে কাজে লাগাতে পারি এবং তাদের যদি সত্যিকারভাবে কাজে লাগানো যায় তবে তারা হয়ে উঠবে মূল্যবান সম্পদ। যা দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। একটি তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আসুন সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব বেকার তরুণদের কে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করি। আর মুছে যাক বেকারত্বের অভিশাপ। মনে রাখবেন, তরুণরা দেশের জন্য বোঝা নয় বরং মূল্যবান সম্পদ।
Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)
Mobile: +88 01516332727 (What's App)