Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

Add 04

জীবন যখন কষ্টের পথে (পর্ব- ০৩)


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। কথা মতো সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যারের সাথে অফিস শেষে বিকেলে দেখা করলাম। আমাকে দেখতেই স্যার খুব সুন্দর করে একটি হাসি দিলেন। মনে হচ্ছে উনি আমাকে টাকাটা দিতে পেরে অনেক স্বস্তি পাচ্ছেন। অত্যন্ত সৎ অফিসার। আমি যতগুলো মানুষ দেখেছি তার মধ্যে এই স্যারকে আমার চমৎকার লেগেছে। স্যারের পদবী এস.পি.এল.ও। কোন অহংকার নেই। নেই কোন ক্ষমতার বড়াই। সুন্দর সাবলিল ভাবে কথা বলেন। মনে হয় মিশে যেতে পারেন মাটি ও মানুষের সাথে। সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার ছিলেন আমার চোখে দেখা একজন চমৎকার মানুষ। পরদিন আবার অফিসে গেলাম। হঠাৎ অন্য এক অফিসার আমাকে তুই করে বলে উঠলো ফাইলটা রেখে আয়। উনি আমার অথরিটিও না। ওনার সাথে এর আগে কখনও আলাপচারিতাও হয়নি। অন্য উইং এর। তুই ডাকটা আমার কাছে মোটেও শোভনীয় মনে হলো না। ওনার এমন ব্যবহারে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

শিক্ষার সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে একটা মানুষের সাথে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা হয়তো ওনার অজানা। ওনার কথা মতো ফাইল না রেখে আসায় আমার স্যারের কাছে এসে নালিশ করলো। ডিউটি অফিসার বজলুর রহমান (ছন্মনাম) স্যার আমাকে ডাকলেন। বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাইলেন। আমি ওনাকে জানালাম খারাপ ব্যবহারের কারণে আমি ফাইল রেখে আসিনি। বজলুর রহমান (ছন্মনাম) স্যার কিছুই বললেন না। বিকেলে সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যারের কাছ থেকে বেতনের টাকা নিয়ে বাড়িতে গেলাম সবার সাথে ঈদ কাটাতে। কিন্তু হঠাৎ আমার এক মামাতো ভাই মারা গেল। সুইসাইড কেস। মাদকাসক্ত ছিল। সেদিন ওর সেই চলে যাওয়াটা আমার কাছে অনেক খারাপ লেগেছে। গোটা পরিবারে নেমে এসেছে শোকের মাতন। ঈদের ছুটি শেষ। ফিরতে দু’দিন দেরী হলো। ঢাকায় পৌছেই অফিসে গেলাম।

সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার কে আজ বেশ গম্ভীর মনে হলে। অফিসের কম্পিউটার ডেক্সে দেখলাম নতুন একজন এসেছে। আমাকে দেখে সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার জানালেন আমাকে আর দরকার নেই। বলে দিলেন আপনি এখন আসতে পারেন। আকাশ থেকে মেঘ ভেঙ্গে পড়লো আমার। মাত্র ৭০০০ টাকা বেতনের আউটসোসিং এর চাকরিটাও আমার চলে গেল। বিষয়টি আমি আমার অথরিটি অফিসার সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার কে জানালাম। তিনি মুঠোফোনে জানালেন আগামী এক মাস অপেক্ষা করুন। এরপর দেখছি কি করা যায়। একমাস পর হঠাৎ সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার কল দিলেন এবং জানালেন কাগজ পত্র নিয়ে অফিসে যেতে। আমি গেলাম। গিয়ে অন্যান্য অফিসারদের সাথে পরিচয় হলাম। নতুন জায়গা নতুন চাকুরি বেশ ভালো লাগলো। 

কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকুরি পেলাম। সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার আমার জন্য অনেক করলেন। বিনিময়ে আমি তার জন্য দোয়া করা ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। এবার বেতন হলো ১০০০০ টাকা। কিন্তু কয়েকদিন না যেতেই সেখানকার সেকেন্ড অফিসার খুব বাজে ব্যবহার করতে লাগলো। দিন দিন তার বাজে ব্যবহার বাড়তে লাগলো। আমি কোন কথার উত্তর বা প্রতিবাদ করি না। এদিকে নতুন মেসে উঠলাম। মেসে অনেক সদস্য। ঢাকাতে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কিন্তু মেস পরিচালকের আচার আচরণ ভালো মনে হলো না। কাজের বুয়ারও না। সিদ্ধান্ত নিলাম কয়েকজন মিলে মেস ছেড়ে দিব। 

নতুন মেস নিলাম। সেখানে গিয়ে পরলাম আরেক সমস্যায়। মেস মেম্বাররাও নানা অনিয়ম আর কাজে লিপ্ত। এবার সিদ্ধান্ত নিলাম আমি একাই মেস ছেড়ে দিব। দিলাম ঠিক তাই। পাশের রুমে গেলাম। সেখানেও দেখলাম কোন পরিবর্তন খুজে পাচ্ছি না। সিদ্ধান্ত নিলাম এবার চাকুরি ছেড়ে দিব। যে শহরে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায় না সে শহরে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। অফিস আর মেসের এই দুই যন্ত্রণায় অবশেষে চাকুরিটা ছেড়ে দিতে বাধ্য হলাম।

সফিউল্লাহ বাদল (ছদ্মনাম) স্যার কে বিষয়টি জানালাম না। কারণ ইতিমধ্যে স্যার ব্রেইন স্টোকে আক্রান্ত। আমি ওনার বাসায় দেখতে গিয়েছিলাম। স্যারের জন্য অনেক দোয় করেছি। মনে হয় আমার আপন ভাইয়ের মতো। ওনার অসুস্থতায় আমার মন ভিষণ খারাপ হয়ে গেল। এই অবস্থায় স্যার কে চাকুরি ছাড়ার বিষয়টি জানানো সমচিত বলে মনে করিনি। ঢাকার সেই জরাজীর্ণ জীবন থেকে ফিরে এলাম নিজ গ্রামের বাড়ি বরিশাল। বেকার জীবন পার করতে লাগলাম। একসময় সিদ্ধান্ত নিলাম কম্পিউটারের যেটুকু কাজ জানি তা দিয়ে নিজেই উদ্যোক্তা হবো। কম্পিউটার ব্যবসায় বসলাম। বাংলা-ইংরেজী টাইপ, ছবি তোলা, স্ক্যান, ফটোকপি, ই-মেইল ইত্যাদির ব্যবসা। ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নিজ গ্রামেই ব্যবসা পরিচালনা করলাম। এরপর ২০২২ সালের প্রথম দিকে ব্যবসার স্থান পরিবর্তন করলাম বরিশাল শহরে। ব্যবসায় ভালো না করায় ২০২৩ সালে সিদ্ধান্ত নিলাম ব্যবসার পাশাপাশি চাকুরি করবো।

অনেক জায়গায় চাকুরির ইন্টারভিউ দিলাম। কিন্তু হলো না। অবশেষে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি নিলাম। কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে। কিন্তু কিছুদিন পর আমার বেতনের টাকা চাইলে নানা তালবাহানা শুরু করে। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমার এক দুলাভাইয়ের মাধ্যমে কিছু টাকা উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এরপর চাকুরিটা ছেড়ে দেই। আবার চাকুরি খুজতে থাকি। অবশেষে আমার এক মামা কম্পিউটারে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি ঠিক করে দেয়। নিজের কম্পিউটার নিয়ে সেখানে প্রায় ছয় মাস চাকুরি করতে থাকি। কিন্তু দিন দিন সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি লোকের খারাপ আচারণের কারণে চাকুরিটা ছেড়ে দিব ভাবছি। কিন্তু সংসার চালাতে হলে তো চাকুরি ছাড়া বিকল্প কিছু দেখছি না। এর মধ্যে বৈষম্য বিরোধী আন্দলোন শুরু হয়েছে। সেই থেকে চাকরি টা আমার চলে যায়। সেখানে আজও প্রায় অনেকগুলো টাকা পাওনা রয়েছে। যা আজও ফেরত পাইনি।

পরবর্তী লেখা পড়তে চোখ রাখুন (৪র্থ পর্বে) .................

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)

☛ আমাদের অনলাইন শপে ভিজিট করুন: OBALARSHOP