রিসালাত মীরবহর।। হৃদপিন্ড মানব দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বুকের ভেতর যে মসৃণ পেশি ছান্দিক সংকোচনের মাধ্যমে আপনার আমার সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে, সেটাই হৃৎপিণ্ড। মূলত এই হৃদপিন্ডের মাধ্যমেই আমাদের মানব দেহে রক্ত চলাচল সচল থাকে। তাই এর যত্ন নেওয়া আমাদের খুবই জরুরী। তবে এখনকার সময়ে আমরা অনেকেই হার্টের সুরক্ষায় যত্নশীল নই। আর এতেই আমরা বিভিন্ন রকম শারীরিক সমস্যায় ভুগে থাকি। মূলত আমাদের বিভিন্ন অনিয়মের কারণে বেশির ভাগ সময়ে হার্টের অসুখ গুলো আমাদের ঘিরে ধরে। নিচে হৃদপিন্ড জনিত অসুস্থথায় কেন আমরা ভুগি সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো।
০১। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস: আমরা অনেকেই ভোজন প্রিয় কিংবা নিয়মের তোয়াক্কা না করে খাদ্য গ্রহণ করে থাকি। হার্টের অসুখ হওয়ার জন্য অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস কে দায়ী করলে সম্ভবত ভুল হবে না। তেল ও চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা কিংবা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করার ফলে দিন দিন আমরা হার্টের সমস্যা গুলোকে বাড়িয়ে তুলছি। এছাড়া আমাদের কিছু বাজে খ্যাদ্যাভ্যাসের কারণে হার্টের সমস্যাগুলো খুব দ্রুত বড়তে থাকে। যেমন: মদ্যপান, তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা কিংবা ধুমপান করা, পানের সাথে যে জর্দা খাওয়া অথবা দীর্ঘদিন কোন মাদক গ্রহন করা, বিভিন্ন রকম ভাজা পোরা খাবার গ্রহন করার ফলে আমরা কোন না কোন একটি সময় গিয়ে হার্টের বিভিন্ন রোগে ভুগে থাকি। তাই অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
২। নিয়মিত ব্যায়াম না করা: কথায় বলে অলস মস্তিস্ক শয়তানের কারখানা। আমরা অনেকেই আছি যারা কষ্ট করতে চাই না কিংবা আয়েসী জীবন কাটাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করি। নিয়মিত শারীরীক ব্যায়ম বা কাজকর্ম না করার কারনে আমাদের হার্টের সুস্থতা থেকে আমরা বঞ্চিত হই। তাই প্রতিদিন আমাদের স্বাভাবিক যে কাজগুলো আছে সেগুলোর সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখা দরকার।
০৩। মানষিক চাপমুক্ত থাকা: মানুষিক টেনশন বা চাপ নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া বেশ দুস্কর। তবে আমাদের হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় সবসময় মানষিক চাপ বা টেনশন মুক্ত থাকা অত্যন্ত জরুরী। মানুষিক চাপ যাতে তৈরি না হয় সেজন্য নিজেকে তৈরি রাখা। প্রতিদিন পরিমিত পরিমান ঘুমানো, নিজেকে আনন্দের মধ্যে রাখতে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ভালো লাগার বিষয়গুলোকে প্রধান্য দেওয়া, পছন্দের মানুষের সাথে কথা বলা, সবসময় হাসি-খুশি থাকা, নিয়মিত ধর্মীয় প্রার্থনা গুলো সম্পন্ন করা। এছাড়া অতিরিক্ত টেনশন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারলে হার্টের অসুখ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে।
০৪। হঠাৎ রেগে না যাওয়া: কথায় আছে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। আমরা অনেকেই আছি হঠাৎ করে রেগে যাই। এরকম হঠাৎ রাগের উপর হয়তো আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কিন্তু এরকম হঠাৎ রাগের কারনে ঘটে যেতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের উপর চাপ তৈরি হয়। ফলে হৃদরোগের ঝুকি তৈরি হয়। তাই হৃদপিন্ড কে সুস্থ রাখতে অতিরিক্ত রাগ বা ক্ষোভ পরিহার করা উত্তম।
০৫। বাহিরের খাবার পরিহার করা: আমরা অনেকেই সখের বসে হোক আর লোভের বসে হোক বাহিরের বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি। হয়তো প্রয়োজনে খেয়ে থাকি অথবা অপ্রোয়জনে খেয়ে থাকি। যাই হোক না কেন এটা পরিহার করা খুবই জরুরী। কেননা বাহিরের খাবারে অতিরিক্ত তেল, মসলা দিয়ে তৈরি। যা আমাদের বিভিন্ন ভাবে অসুস্থ করে তুলতে পারে। এছাড়া বাহিরের বিভিন্ন খাবার গুলো অনেক সময় পুরোনো তেল দিয়েই নতুন করে তৈরি করা হয়। ফলে তার আমাদের জন্য নিরাপদ খাবার হিসেবে বিবেচিত হয় না। প্রতিদিন এমন খাবার গ্রহণ করার ফলে কেবল হার্ট নয় লিভার জনিত সমস্যাগুলোও তৈরি হচ্ছে। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে যতটা সম্ভব বাহিরের খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখা ভালো।
০৬। প্রস্তুতকৃত খাবার না খাওয়া: আমরা দোকানে সচারাচার বিভিন্ন রকম প্যাকেটজাত খাবার খেয়ে থাকি। বিভিন্ন গবেষনায় দেখা যায় এসব প্যাকেট জাত খাবার মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বাচ্চাদের খাদ্যাভ্যাসে এসব প্যাকেটজাত খাবার থাকায় গ্যাস্ট্রিক, বমি বমি ভাব, খাবারে অরুচি মতো সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। এছাড়া নিম্নমানের বিভিন্ন কোম্পানির কোমল পানীয় গ্রহণ করার কারণে আমাদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা যায়।
০৭। ধর্মীয় কাজে মনযোগী হওয়া: আমরা অনেক সময় মানবিক মূল্যবোধ ছাড়া জীবন কাটাই। আর এতে করে আমাদের কখনো কখনো মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, অনেক সময় মানুষের সাথে প্রতারণা করে থাকি, বিনা কারনে কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকি, কারও সাথে বিনা কারনে বিনা প্রয়োজনে অন্যায় করে থাকি। ফলে একটা সময় আমাদের মনের মধ্যে চাপ তৈরি হয়। যার ফলে হৃদপিন্ড অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় এগুলো থেকে বের হয়ে ধর্মীয় ভাবধারায় সত্য ও সুন্দর জীবন যাপন গড়ে তোলা।
০৮। ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া: হার্টের বিভিন্ন সমস্যা অনুভব করলে দ্রুত একজন ভালো কার্ডিওলজি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করা। প্রয়োজনে হার্টের বিভিন্ন আধুনিক চিকিৎসা গ্রহণ করা। যেমন: কোলেস্টেরল, ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাম, ইটিটি, অ্যানজিওগ্রাম, রিং পরানো, বাইপাস অপারেশন করানো সহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করা।
০৯। খাদ্য তালিকায় রাখা দরকার: প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল রাখা দরকার। হৃদপিন্ডের সুস্থতায় রেড মিট, অতিরিক্ত লবন গ্রহন, এ্যালকোহল কিংবা মাদক মুক্ত থাকা, নিয়মিত ঘুম ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মেনে চলা খুবই জরুরী। এছাড়া বেশি বেশি আশযুক্ত খাবার গ্রহন করা, ওমেগা-৩, বি-৬, বি-১২ ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন করা, উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, কোলেষ্টেরাল যাতে বৃদ্ধি না পায় সে দিকে লক্ষ রাখা। শিম ও ডাল জাতীয় শস্যও খেতে পারেন। এছাড়া বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবারে থাকে ভিটামিন ই। হার্টের সুস্থ্যতার জন্য এসব নিয়ম মেনে চলা খুবই জরুরী।
আমি কোন ডাক্তার নই। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে উপরোক্ত বিষয়গুলো মেনে চললে হয়তো আপনি হৃদরোগের ঝুকি থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে পারেন। পরিশেষে আমি হার্টের সুস্থতায় খুব সকালে হাটার উপর গুরোত্ব দিচ্ছি। প্রভাতের নির্মল বাতাসে নির্জন কোন একজায়গায় আপনি যেতে পারেন। যেমন: নদীর পাড়ে, খোলা কোন মাঠে কিংবা বড় কোন গাছের নীচে। যেখানে আপনি সকালের নির্ভেজাল, নির্মল অক্সিজেন গ্রহন করতে সক্ষম হবেন। আপনার নিয়মিত নিয়মতান্ত্রিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও নিজেকে টেনশন মুক্ত রাখতে পারলে আশাকরি হার্টের সমস্যাগুলো তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।
Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)
Mobile: +88 01516332727 (What's App)