Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

বাড়ছে মানুষের হাতে মানুষের মৃত্যু

মোঃ রিসালাত মীরবহর।। “কুল্লু নাফসিন জাইকাতুল মাউত” অর্থ:- প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। [ আল ইমরান -১৮৫ ] পৃথিবীতে আপনি যাই করেন না কেন এমন একটা সময় এমন একটি দিন আপনার আমার সামনে উপস্থিত হবে যখন দুনিয়ার সমস্ত মায়া মহব্বত হতে চিরদিনের জন্য বিদায় নিতে হবে। আরেকটু পরিস্কার করে যদি আমরা বলি তবে, মানুষের জন্মই হয় মূলত মৃত্যুর জন্য। পৃথিবীতে কোন মানুষই সারাজীবনের জন্য আসে না। আমরা এই পৃথিবীর স্থায়ী বাসিন্দা নই। এই বিষয়টি যদ দ্রুত আমরা বুঝতে পারবো তত দ্রুত আমরা আমাদের মনকে পরিবর্তন করতে পারবো।

বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি একটি মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে জীবন নিয়ে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। নানা কারনে বাড়ছে অস্বাভাবিক মৃত্যু হার। আগে যেমন একটি বয়স হলে মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি কে সাধারন ভাবে চিন্তা করা যেত এখন সেখানে মানুষের মৃত্যু যেন হরহামেশাই ঘটছে। যুগে যুগে মানুষের কাছে মৃত্যু একটি পরিচিত বিষয় হলেও বর্তমানে তা যেন খুব সাধারন বিষয়ে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে মানুষের হাতেই মানুষের মৃত্যুর ঘটনা আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, মানুষকে মারতে গিয়ে ঘাতকের হাত কাঁপছে না মোটেই। এটা যেন খুব সাধারণ ও স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। চাইলেই যে কাউকে যখন তখন মেরে ফেলা একটি সহজ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অথচ পবিত্র ধর্মীয় গ্রন্থ আল- কুরআনে মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা করা জঘন্য একটি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

অনেকগুলো কারনে মানুষের মৃত্যু হার দিন দিন বাড়ছে। যেমন: বিদ্যুৎস্পর্শে, পুকুর, নদী কিংবা সাগরে গোসল করতে গিয়ে, কখনো বিষাক্ত সাপের ছোবলে, সড়ক দূর্ঘনায়, গাছ পড়ে মানুষের মৃত্যু, আত্মহত্যার প্রবণতায় মৃত্যু, বিভিন্ন বিষাক্ত প্রাণীর আক্রমনে, ছাদ থেকে পড়ে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হত্যা সহ বিভিন্ন দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, দেশে দেশে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে, বন্যা, খড়া কিংবা ঘূর্ণীঝড় সহ মাহামারিতে মৃত্যু হার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা, হঠৎ করে স্ট্রোক, লিংগ বৈষম্যের কারনে অনাগত ভ্রুন হত্যা সহ অসাবধনাবসত অনেক কারণ রয়েছে যেগুলোর ফলে প্রতিনিয়ত মানুষের মৃত্যুর ঝুকি তৈরি হচ্ছে।

আমরা কি জানি পৃথিবীতে এমন অনেক দম্পত্তি রয়েছে যারা একটি বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য কতটা বছর কতটা সময় অপেক্ষা করে? আমরা কি জানি একটি শিশিুকে ছোট বেলা থেকে লালন পালন করতে গিয়ে তার পরিবার তাকে নিয়ে কতটা স্বপ্ন দেখে? কত আশার আলো নিয়ে তারা নিদ্রাহীন জীবন কাটায় রাতের পর রাত? হয়তো আমরা জানি অথবা জানার চেষ্টা করি না। অথচ স্বার্থের প্রয়োজনে একটি মানুষকে রক্তাক্ত করে মেরে ফেলতেও আমরা দ্বিধা বোধ করছি না। মানুষ এমনিতেই পদে পদে মৃত্যু বরণ করছে। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যে নিরাপত্তা প্রয়োজন সেটি এখন আর নেই বললেই চলে। কেননা উপরে উল্লেখিত মানুষের মৃত্যুর কারন হিসেবে যেসব বিষয়গুলো কে তুলে আনা হয়েছে তা আমরা কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারি না।

মানুষ হয়ে মানুষকে মারার পিছনে বিভিন্ন কারন থাকতে পারে। তবে যে সকল দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে কিংবা আইনের সুশাসন পরিলক্ষিত হয় সেকল দেশে মানুষের হাতে মানুষের মৃত্যুর বিষয়টি খুবই নগন্য হিসেবে প্রতিয়মান হয়। কিন্তু যে সকল দেশে মূলত বিচারহীনতা, সেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সহ আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগ সম্ভব হচ্ছে না সে সকল দেশের মানুষ আইনকে নিজ হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে। কাজেই এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড রোধে অবশ্যই দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে সমুন্নত রাখতে হবে, প্রশাসনিক ন্যায় বিচার কে সুনিশ্চিত করতে হবে, রাস্ট্রের টেকসই উন্নয়ন কে অগ্রাধীকার দিতে হবে। সমাজ ও রাস্ট্রে যখন মানুষ ন্যায় বিচারের সুফল ভোগ করতে পারবে তখন এসব হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

যে কারণেই হোক না কেন বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড কোনভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই সুন্দর একটি পৃথিবী, সুন্দর একটি সমাজ  এবং সুন্দর একটি দেশ। যেখানে থাকবে না কোন অনিয়ম, থাকবে না কোন বিচারহীনতা, সেচ্ছাচারিতা, দলীয়করণ, ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম কিংবা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। সকল ক্ষেত্রে থাকবে জবাবদিহিতা ও টেকসই গণতান্ত্রিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা। সমাজ ও দেশ থেকে বিতারিত হোক সকল অনিয়ম আর দুর্নীতি। দল, মত নির্বিশেষে দেশকে ভালোবেসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন কে কিভাবে তরান্বিত করা যায় সে বিষয়ে সবার দৃষ্টি দেয়া। ক্ষুধা, দারিদ্রতা কিংবা বেকারত্বের মতো অভিশাপ থেকে আমরা যত তারাতারি মুক্ত হতে পারবো তত তারাতারি আমরা উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলেয়ে আমরা আমাদের দেশের উন্নয়নকে বেগবান করতে সক্ষম হবো।

প্রতিহিংসা, লোভ, অনিয়ম, বিচারহীনতা, দুর্নীতি দিয়ে নিশ্চিয়ই একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক রাস্ট্রের কল্পনা করা যায় না। তাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রত্যেক নাগরিক কে সচেতনতার সাথে মানবিক মূল্যবোধ ও সত্যিকারের বিবেক দ্বারা জাগ্রত হয়ে দেশ ও জনগনের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ভুমিকা রাখা অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)