Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

জীবন যখন কষ্টের পথে (পর্ব- ০১)

মোঃ রিসালাত মীরবহর।। একটি শিশু জন্ম নেওয়ার সময় পৃথিবী জুড়ে কত আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তার পরিবার তখন এতোটাই খুশি হয় যা বলে প্রকাশ করা যাবে না। কিন্তু সেই শিশুটি যখন বড় হতে থাকে তখন তার মৌলিক অধিকারগুলো মিটাতে হিমশিম খেতে হয় পরিবারের। দেশে বেকাত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যে হারে শিক্ষার মান বেড়েছে সে হারে বাড়েনি কর্মসংস্থান। আবার যারাও কর্মসংস্থান পেয়েছে তাদের আগের তুলনায় অধিক কাজ করতে হচ্ছে। অর্থাৎ আগে যেখানে একই পদের জন্য একটি বা দুটি বিষয়ের উপর নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদন করতে হতো এখন সেখানে একের ভিতর ১০ খুজে বেড়াচ্ছেন নিয়োগ কর্তারা। নিয়োগ কর্তা আপনাকে নিয়োগ দিয়েছেন কিন্তু নির্ধারিত কর্মের বাইরেও কাজ করতে আদেশ করছেন। যা দিনের পর দিন চলতে চলতে একসময় হতাশায় ভুগছেন অনেকেই।

আজ আমি আপনাদের আমার কর্মজীবনের কিছু বাস্তব উদাহরণ তুলে ধরবো। বাবার অনেক কষ্টের টাকা দিয়ে ১০টি বছর পার করেছি স্কুলে। এই ১০ বছরে একটি সন্তান কে মানুষ করতে কত টাকা খরচ করতে হয় তা আপনারই নির্ণয় করুন। এরপর কলেজ জীবন আরও দুটি বছর। এরপর অনার্স কিংবা ডিগ্রি পাশ করতে ভয়াবহ সেশন জট। সব মিলিয়ে সবার জীবন থেকে হারিয়ে যায় অনেকগুলো বছর। আজ আর কেউ আপনাকে নিরক্ষর বলতে পারবে না। আজ আপনি সর্ব শিক্ষিত। এভাবে পাশ করে বের হয়েছি। চাকরির জন্য ঘুরছি। কিন্তু কে দিবে চাকরি? তবুও চাকুরি খুজে বেড়াচ্ছি।

সবজায়গায় তখন কম্পিউটার শিক্ষা গ্রহণ করার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কম্পিউটার শিখলে হয়তো একটি চাকুরি জুটবে। এটা ভেবে ৬ মাসের জন্য বাবার আরও ৩০,০০০ টাকা (যাতায়াত ভাড়া সহ) দিয়ে কম্পিউটার শিখতে গেলাম গ্রাম থেকে শহরে। ৫০ টি কম্পিউটার একটি রুমের মধ্যে বসানো। শিক্ষক মাত্র একজন। ছাত্র ৫০ জনার মতো। প্রতিদিন এক ঘন্টা করে প্রশিক্ষণ। যদি শিক্ষক একজন করে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জন্য ১ মিনিট করে দেখায় তবে ৫০ মিনিট সময় পার হয়ে যায়। আমিও তাই পেলাম মাত্র ১ মিনিট কিংবা দের মিনিট। এভাবেই ক্লাস শেষ হয়। এই হচ্ছে ৩০,০০০ টাকা খরচ করে প্রতিদিন ১ মিনিটের জন্য পাওয়া একটি সনদ।

সনদ পেয়ে চাকরির জন্য ছুটছি। কোথাও কোন চাকরির সন্ধান পেলাম না। হঠাৎ একদিন ঢাকায় গেলাম চাচাতো ভাইয়ের কাছে। চাচাতো ভাই বললো দেখি তোর জন্য একটি চাকুরির ব্যবস্থা করা যায় কিনা? আমি তো মহা খুশি। পেপারে দেখলাম একটি চাকরি বিজ্ঞপ্তি। গেলাম সেখানে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী। গিয়ে দেখলাম অনেকেই আসলো চাকরির ইন্টারভিউর জন্য। একে একে অনেকের ইন্টারভিউ শেষ হলো। এবার আমার পালা। নাম, ঠিকানা জিজ্ঞেস করে বললো আগামীকাল সকাল ৭:৩০ মিনিট এর মধ্যে অফিসে উপস্থিত থাকতে। আপনার চাকুরি হয়ে গেছে। অথচ আমি তখনও বুঝতে পারিনি আসলে আমার কাজটি কি? পরদিন সবাই ঠিক সময় মতো অফিসে উপস্থিত। রাতে ঠিকমতো ঘুমতো পারিনি। 

নতুন চাকরি নিজের কাছেই খুব খুশি খুশি লাগছে। জীবনের প্রথম চাকুরি। আবেগে বেতন কিংবা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা কি তা জিজ্ঞাসা করা হয়নি। চাকরি পেয়েছি সেটাই বড় কথা। অন্তত বেকার জীবনের চেয়ে তো ভালো। সকালে গিয়ে দেখালাম সবাই কে লাইনে দাড় করানো হলো। প্রতি লাইনে একজন টিম লিডার দেওয়া হলো। দুজন দুজন করে ভাগ করে দেওয়া হলো। আমার সাথে খুব ভালো মানের ইংরেজী জানা একটি পাহাড়ী ছেলেকে দেওয়া হলো। ছেলেটি দেখতে স্মার্ট, সেই সাথে তার ইংরেজী বলা তখন আমার কাছে অনেক বিলাশী মনে হয়েছিলো। ভেবেছিলাম হয়তো এর সাথে থাকতে পারলে জীবনে কিছু শিখতে পারবো।

সকাল ৮ টার মধ্যে বেড়িয়ে পরলাম। গন্তব্য সম্ভবত উত্তরার দিকে। যত বড় বড় কোম্পানির অফিস আছে তা ভিজিট করতে হবে। আমার হাতে একটি ওজনওয়ালা বইয়ের বোঝা দেওয়া হলো। যেটাতে অন্তত ১০ টি বড় বড় বই দেওয়া রয়েছে। এবার অফিসে ঢোকার পালা। অফিসের নিচে আসলে জিজ্ঞেস করছে কোথায় যাবেন? আমরা এমডির লোক ভিতরে তার সাথে দেখা করতে যাবো। ব্যাস দরজা খুলে ভিতরে যাচ্ছি। এমডির রুমে। গিয়ে সালাম দিলো সেই পাহাড়ী ছেলেটি। তখনও আমি বুঝতে পারিনি আসলে আমার চাকরিটা কি? এরপর দেখলাম ওর পিঠে নেওয়া ব্যাগ থেকে একটি বই বের করলো। উপরে লেখা অক্সফোর্ড ডিকশনারী। ইংরেজীতে এমডিকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিছু। ছেলেটি গড় গড় করে ইংরেজীতে কথা বলছে। সম্ভবত কোন ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য পাশ করা।

আমি ইংরেজীতে তখন তত ভালো ছিলাম না। তাই তেমন ভালোভাবে বুঝতে পারিনি কথাগুলো। দেখলাম একটি বই নিয়ে কিছুক্ষণ পরে পকেট থেকে এমডি টাকা বের করে দিল। এবার আবার অন্য অফিসে যাওয়ার পালা। গিয়ে দেখালাম এবার ছেলেটির ইংরেজী কাজ হচ্ছে না। এমডি লুঙ্গি পড়া। জাত বাঙ্গালী। উনি একটু ইতস্তত করে বললো, আমায় বাংলায় বুলুন। আমি দের টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছি। আজ কোটিপতি। এরপর পাহাড়ী ছেলেটি বললো স্যার, একটা বই নিবেন? খুব ভালো, যে কোন ইংরেজী ওয়ার্ড খুজে পাবেন। সাথে বাংলা অর্থ। এই বইগুলো সচারাচর কিনতে পাবেন না। পাহাড়ি ছেলেটির কথা শুনে শখের বসেই এমডি কিনে নিলো। কারণ ‍উনি এ বিষয়ে তেমন ভালো বোঝেন না। তবুও টেবিলের এক পাশে বইটি সাজিয়ে রাখলেন।

এরপর ৭ থেকে ৮ তলা ব্লিডিং এ যেতে হয়েছে। অধিকাংশ ভবনগুলোতে তখন লিফটের ব্যবস্থা ছিলো না। পাহাড়ী ছেলেটা খুব দ্রুত হাটছে। আমার কাছে যে বইগুলো রয়েছে সেগুলোর অনেক ওজন ছিলো। যা বহন করার মতো সামর্থ আমার ছিলো না। বইগুলো নিয়ে এতো উঁচু উঁচু ভবনের সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠা অনেক কষ্টের ছিলো। দুপুরে কেবল একটি রুটি আর একটি কলা খেলাম। সময় যত যাচ্ছে তত বই কমে যাচ্ছে। বেশ কিছু অফিসে সেই অভিধান গুলো বিক্রি হয়েছে। এবার পরন্ত বিকেল। সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে ১০টি বই বিক্রি করে অফিসে ফিরে আসতে পারলে থাকছে বোনাস টাকা। দ্রুত পরন্ত বিকেলে ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিসে আসলাম। তখন বাজে ৫:৪৭ মিনিট। পাহাড়ী ছেলেটা বোনাস পেল। আর আমি কিছুই পেলাম না। চলে আসলাম বাসায়। রাতে ঘুমোতে পারছিনা। সারা শরীর ব্যাথা করে, প্রচন্ড ব্যাথা। পরদিন অফিসে যাওয়ার মতো কোন অবস্থা নেই। চাচাতো ভাইকে সব খুলে বললাম। ভাই বললো তুই এই চাকুরি করতে পারবিনা। এটা অনেক কষ্টের চাকরি। বেতন নেই শুধু কমিশন। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। কমিশন ভিত্তিক চাকরি? পরদিন পত্রিকায় আবারো খুজতে থাকলাম চাকরি।

পরবর্তী লেখা পড়তে চোখ রাখুন (২য় পর্বে) .................

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)
☛ অনুগ্রহ করে অন্যান্য সেবা পেতে ভিজিট করুন: (Click)