Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

বাবা বুঝাতে চাচ্ছেন তার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। সেদিন খুব সুন্দর একটি দিন ছিল। চারদিকে খুশির বন্যা। সবাই যেন নতুন মেহমান বরণে নতুন সাজে সেজেছে। সবাই তাই খুশিতে আনন্দে মেতে উঠেছে। নারকেলের নাড়ু, মিষ্টি, পিঠা আর পায়েস  সহ নানা আয়োজনে চারপাশ যেন এক নতুন আশায় মাতোয়ারা। মেহমান আসছে, তাই অপেক্ষা সেই মাহেন্দ্রক্ষণের। রৌদ্র উজ্জ্বল সকালে মায়ের বুকে নতুন এক শিশুর আগমন। গাছে গাছে তখন পাখিদের কলোরব। নতুন সাজে সেজেছে পত্রপল্লব। চারদিকে বইছে ফুলের সৌরভ। গোলাপ, জবা, বেলি, গন্ধরাজরা তখন জানান দিচ্ছে আমরাও আনন্দিত নতুন মেহমানের আগমনে। ধরণীর বুকে তখন এক মোহনীত সৌরভ ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে।

অবশেষে পৃথিবীর বুকে মায়ের কোলে জন্ম নিলো এক ফুুটফুটে শিশু। সবাই তখন তাকে কোলে নেওয়ার ব্যস্ততা। বাবা-মায়েরও তখন বাঁধ ভাঙ্গা আনন্দ। গোটা বাড়ি যেন আনন্দে মেতে উঠেছে। এক কোল থেকে আরেক কোলে এভাবে তখন শিশুটি ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা জনের কাছে। সেই ছোট থেকে বাবা-মায়ের হাত ধরে বড় হলে থাকলাম। পড়াশুনা থেকে শুরু করে যে কোন বায়নাই পূরণ করতেন বাবা। কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করলে তা যত দামীই হোক না কেন তা কিনে দিতে কখনও দেরি করতেন না। যত কষ্টই হোক না কেন আমার আবদার যেন অপূরণ থাকতো না। বাবা নামের এই মহান মানুষটি বুঝি এমনই হয়। প্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ স্যার বলেছিলেন, “পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু একজনও খারাপ বাবা নেই।” বলছি আমার বাবার কথা। বাবা কে যত দেখেছি তত অবাক হয়েছি। জীবনে খুব কাছ থেকে বাবার স্নেহে অত্যন্ত আদরে বড় হয়েছি। কোন কিছুর অভাব যেন কখনও আমাকে চিন্তিত করেনি। করেনি আমাকে ভাবুক। কারণ আমার একজন বাবা আছেন।

আমার বাবা খুবই সহজ সরল একজন মানুষ। নিজের বাবা বলে বলছিনা। যারা তার সাথে জীবনের অনেকটা সময় পার করেছেন তারা জানেন তিনি কেমন? জীবনে তিনি অনেক কিছু সহ্য করেছেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত তাকে সইতে হয়েছে। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল তিনি সবার সাথে মিশতে জানতেন, সবাইকে আপন করতে জানতেন। সবাইকে কথা ও কাজ দিয়ে ভালোবাসতে জানতেন। কিন্তু আমি যখন বড় হতে লাগলাম যখন কিছু কিছু বুঝতে শিখলাম তখন দেখলাম বাবা-মায়ের কষ্ট। কিন্তু সে কষ্টগুলো যেন আমাকে ছুতে পারেনি। আমাকে আগলে রাখা হয়েছে যেন অতি যত্নে। আজও মনে আছে সেই ছোট বেলার কথা। মায়ের আচল ধরে হাটতাম। বাবার কোলে চড়তাম। জীবনে বাবা আমার কোন আবদার অপূরণ রাখে নাই। যখন যা চেয়েছি শত কষ্টের মাঝেও তা আমাকে দিয়েছেন।

আমি আর বাবা যখন পাশাপাশি গ্রামের বাড়ির রাস্তা দিয়ে হাটতাম মানুষ তখন বলত দুই বন্ধু যাচ্ছে। অনেক সময় আমাদের রাস্তায় দাড় করিয়ে অনেকে বলতো খুব ভালো লাগছে আপনাদের দু’জনকে একসাথে পথ চলতে দেখে। আমি বাবার একমাত্র ছেলে সেই হিসেবে বাবা আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতেন। আজও সেভাবেই ভালোবাসেন। এখন বাবার ৭৪ বছর বয়স। অনেক দিন ধরে বাবা বলছেন তার শরীর ভালো নেই। আবার কখনও এই ভালো এই মন্দ। প্রায়ই আজকাল বলছেন ভালো নেই তিনি। আকার ইঙ্গিতে বোঝাতে চাইছেন সময় হয়েছে এবার যাওয়ার। এর আগে তিন মাসের মত বিছানায় ছিলেন। পায়ে প্রচন্ড ব্যাথা। হাটতে পারতেন না। কোন মতে নুয়ে নুয়ে বাথরুমে যেতেন। ডাক্তার দেখালে তিনি জানান বার্ধ্যক্যের কারনে পায়ের নার্ভ সিস্টেমগুলো দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

বাবা ক্রমশ মানের দিক থেকে ‍দুর্বল হয়ে যাচ্ছেন। শরীরও তার আর চলতে চাইছে না। বাবা এখন প্রায় সময় তার চলে যাওয়ার কথা বলছেন। আমি এসব কথা শুনতে মোটেই প্রস্তুত নই। তিনি বোঝাতে চাইছেন চিনি অনন্ত পথের যাত্রী হতে যাচ্ছেন। দিন দিন এসব কথা আমাকে যেন আরও বেশি চাপে ফেলছে। আমি বাবার সব কষ্টগুলো বুঝতে পারছি। কিন্তু আমি তার কথাগুলোকে এড়িয়ে যাই। তাকে কাউন্সিলিং করানোর চেষ্টা করি। তাকে বুঝাই জীবনের সুদীর্ঘ পথ আপনি পারি দিয়েছেন। ৭৪ বছর বয়স কম নয়। এই বয়সে অনেক মানুষ এই পৃথিবী ত্যাগ করে চলে গেছেন। মহান আল্লাহর রহমতে আপনি এখনও ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ বলেন। বাবা সাথে সাথে আলহামদুলিল্লাহ বলেন। আমি তাকে বলি এখন কত মানুষ বয়সের আগেই মৃত্যুবরণ করছেন। স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক করে জীবনের ইতি ঘটছে। অথচ মহান আল্লাহর রহমতে আপনাকে আল্লাহ কত ভালো রেখেছেন।

বাবার উচ্চ রক্তচাপ বাদে আর তেমন কোন জটিল রোগ নেই শরীরে। এটা মহান আল্লাহর অশেষ কৃপা। তিনি এতটা সৎ মানুষ যা চিন্তার বাইরে। কোন দিন সুদ, ঘুষ, হারাম ইনকাম কিংবা অন্যায়ের সাথে সামিল হন নাই। কেউ অন্যায় ভাবে তাকে কখনও কিছু বললেও তিনি তার সাথে ভালোভাবে কথা বলতেন। জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাই-বোন কে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বাবা কে অনেক মানুষ ঠকিয়েছে। তার টাকা মেরে দিয়েছে। কিন্তু বাবার কোন অভিযোগ নেই। আমি একদিন বাবা কে জিজ্ঞেস করলাম বাবা এতটাকা আপনার মানুষের কাছে পাওনা রয়েছে তবুও আপনি কষ্ট করছেন? এ টাকাগুলো তোলার দায়িত্ব একজন কে দিলেই তো সে সব টাকা তুলে আনতে পারে পাওনাদারদের কাছ থেকে। বাবা জানালেন ইচ্ছে করলে জোর করে পাওনা টাকা তুলে আনতে পারতাম। কিন্তু অনেক মানুষ আছে যারা গরীব। হয়তো অনেক কষ্টে দিন পার করছে। আমি যদি এই টাকা জোর করে তুলে আনি তবে ওরা পরিবার নিয়ে যাবে কোথায়? যদি অভিশাপ দেয়। তখন আমি এই টাকা ভোগ নাও করতে পারি।

আজ বাবা আমাকে বললেন, তুমি আমার সবকিছু বুঝে নাও। তোমার বাড়িঘর, সম্পত্তি সবকিছু। আমি কথাগুলো বাবার এড়িয়ে গেলাম। আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম বাবা দুনিয়াতে একটি দানা আপনার জন্য বরাদ্দ থাকা পর্যন্ত আপনার যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তাই আপনি এসব বিষয়ে চিন্তা করবেন না। যখন তাকে বুঝাই তখন সে বুঝে। আবার পরে তার শারীরীক কষ্টের কথা জানায়। আমি সবই বুঝি কিন্তু আমি তাকে আরও নরম হওয়া থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করি। বাবা হয়তো মনে মনে ভাবেন আমি তার কোন কথা খুব বেশি মনযোগ দিয়ে শুনছি না। কিন্তু আসলে বিষয়টি তা না। আমি তার সমস্যাগুলো বুঝতে পারছি। কিন্তু তাকে বুঝতে দিচ্ছি না। সে বারবার বলতে চাইছে সময় হয়েছে এবার যাওয়ার। আর আমি তাকে বোঝাতে চাইছি আপনার চেয়েও অনেক বছর বয়সী মানুষ দেখুন কত জোড়ে হাটছে, কত পরিশ্রম করছে।

কথাগুলো শুনে আবার কিছুটা ঠিক হয়ে যান। আমার বাবা খুব ভোজন প্রিয় একজন মানুষ। তিনি মানুষ কে খাওয়াতে জানতেন আবার নিজের খেতে জানতেন।  তার জীবনের অনেক গল্প তিনি আমাকে শুনিয়েছেন। প্রতিটি গল্প মুগ্ধকর আর শিক্ষনীয়। আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যার্থতা আমি আমার বাবার জন্য কিছুই করতে পারিনি। এটা শুধু আমার ব্যার্থতা নয় আমার সবচেয়ে বড় কষ্ট। প্রতিটি বাবা-মা চায় তার সন্তান বড় হোক, প্রতিষ্ঠিত হোক। তাদের মনের আশা পূরণ করুক। কিন্তু সে স্বপ্ন কখনও বাস্তাব হয় আবার কখনও বাস্তব হয় না। পৃথিবীর নিয়মগুলো সম্ভবত বড় অদ্ভত। আমরা হয়তো সে নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। চেষ্টা করেও হয়তো আমরা সে নিয়ম কে ভাঙ্গতে পারি না। নিয়মের বেড়াজালে অনেক কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও তা হয়তো কখনও কখনও সম্ভব হয় না। বাবার দিন দিন নরম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে অসহায়ের মতো লাগছে। কারণ পৃথিবীতে একজন মানুষ কে আমি আমার হৃদয়ের সবটুকু দিয়ে ভালোবাসি আর তিনি হচ্ছেন আমার বাবা।

বাবা বুঝাতে চাইছেন কখন যেন সে হারিয়ে যাবে। কিন্তু বাবার এই হারিয়ে যাওয়ার কালে আমি কি আসলে প্রস্তুত? আমি কি তার এই হারানোর বিষয়টি কে মেনে নিতে পারবো? জীবনের এই বয়স পর্যন্ত আমি তার হাত ছাড়িনি আর সেও আমার হাত ছাড়েনি। বাবা খুব নরম হয়ে প্রায়ই বলছেন হয়তো আমার এবার যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আমি বাবাকে ধরে রাখার জন্য বলছি বাবা আমিও তো যাব কোন একদিন। এতো তারা কেন বাবা আপনার? আর কিছুদিন থাকি না এই পৃথিবীতে একসাথে। আমার অনেক কথা বলার ছিল বাবা কে। কিন্তু তিনি সহ্য করতে পারবেন কিনা তাই ভেবে বলতে পারছি না। আমি চিৎকার করে বলতে চাই বাবা আমি আপনাকে আমার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। আমি আপনাকে কোথাও হারিয়ে যেতে দেব না। বাবা কে বোঝাতে চাইছি বাবা আপনার এখনও সময় হয়নি যাওয়ার। আপনি যা যা জীবনে আমার জন্য করেছেন, যত ত্যাগ স্বীকার করেছেন? আমার জন্য যত কষ্ট করেছেন সেগুলোর মূল্য আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারলেই কেবল ভাববো আপনি যেতে পারবেন কিনা?

বাবা কে বিকালে হাটতে বের করি। জানি তার অনেক কষ্ট হয়। আমি বুঝতে পারি কিন্তু যদি সে বিছানায় সময় কাটায় তবে তাকে বিছানা আর ছাড়বে না। এই ভয়ে আমি তাকে সামান্য একটু হাটার জন্য বের করি। বাবার সাথে পাশাপাশি হাটি। বাবা কথার মাঝেই বলে উঠেন তার যাওয়ার সময় হয়েছে। আমি বাবার মুখের এই কথাগুলোর জন্য মোটেই প্রস্তুত নই। কেন বাবা হারিয়ে যাবেন? বাবা আমার কাছে থাকবেন। আমি বাবা কে নিয়ে ঘুরতে যাবো। বাবা কে কিছু কিনে দিব। খুব কষ্ট হচ্ছে আজ আমি এক ব্যার্থ সন্তান হয়ে তার জন্য কিছুই করতে পারিনি। 

বাবা বুঝাতে চাচ্ছেন তার যাওয়ার সময় হয়েছে। কিন্তু আমি তো তার কোন কিছুর প্রতিদান দিতে পারলাম না। হে আল্লাহ আমার বাবা কে দয়া করে সময় দিবেন। যাতে আমি তাকে ভালো রাখার জন্য সবকিছু করতে পারি। আমি তো তার জন্য কিছুই করতে পারলাম না। বাবা থাকবেন আমার কাছে আমার বুকের মধ্যে। আমি বাবা কে আগলে রাখবো। কোথাও যেতে দেব না। আমি যে বাবা কে অনেক বেশি ভালোবাসি। তার হারিয়ে যাওয়া আমি কিভাবে মেনে নিব? এটা আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভারি বিষয় হয়ে যাবে যে। এ ভার বহন করা আমার পক্ষে কখনও সম্ভব নয়। ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবারা।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)
☛ অনুগ্রহ করে অন্যান্য সেবা পেতে ভিজিট করুন: (Click)