Hot Widget


Type Here to Get Search Results !

লেখাপড়ার একাল আর সেকাল


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। জ্ঞান বৃদ্ধিতে লেখা পড়ার কোন বিকল্প নেই। মানুষ্য জগতে আজকের মানুষ যে অবস্থা থেকে পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে আগে ঠিক এমনটি ছিল না। প্রাচীন কালে মানুষ যে অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে আজকের মানুষ হয়তো তা চিন্তাই করতে পারে না। যুগের পালা বদলে মানুষ তার অবস্থান ও চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ঘটিয়েছে। একটা সময় ছিল যখন মানুষ অন্ধকারে বাস করতো। আর এখন বিশ্বায়নের এই যুগে আমরা বিজ্ঞানের নানা সুফলগুলো ভোগ করছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে মানুষের শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের ফলে। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে আমরা শিক্ষার সুফল পাচ্ছি না। বরং আমরা দিনে দিনে আরও উন্নত ও শিক্ষিত হয়ে উঠছি। জানছি বিশ্বের নানা বিষয় সম্পর্কে।

ছোট বেলায় জীবন শুরু হয় মক্তবে পড়ার মধ্য দিয়ে। খুব সকালে ঘন্টা বাজতো। এটাকে আমরা ছোট বেলায় বেল বলতাম। বেলের এই শব্দ কানে আসতেই খুব সকালে মা ঘুম থেকে উঠিয়ে দিত। আধো আধো ঘুমু ঘুমু চোখে মক্তবের দিকে রওনা হতাম। গিয়ে দেখতাম আমার মতো ছোট ছোট আরও অনেকেই সেখানে উপস্থিত। মক্তবের হুজুর হাতে একটি বড় বেতের লাঠি নিয়ে বসে থাকতো। কিছুক্ষণ পর মক্তবে সবাই এসে জড়ো হোত। আর অমনি নামাজ শিক্ষার বিভিন্ন বিষয়ে গুলো শিখিয়ে দিতেন হুজুর। কিভাবে খানার আগে দোয়া পড়তে হয়? কখন নামাজ পড়তে হয়, মানুষের সাথে কিভাবে ভালো ব্যবহার করতে হয়, গুরুজনকে কিভাবে সম্মান দিতে হয়। এছাড়ার আরও অনেক নিয়ম কানুন বলে দিতেন। আবার এগুলো সবাই মিলে একসাথে উচ্চস্বরে পড়তাম। মনে হতো রুমটা ফেটে যাচ্ছে। ৪৫ মিনিট পর আবার ঘন্টা বাজতো। সবাই সালাম দিয়ে যে যার মতো করে দৌড়ে বাড়ি চলে যেত।

মক্তব পার করে প্রাইমারী স্কুলে। সে কি দূরন্তপনা। নতুন বছর, নতুন বই, নতুন সহপাঠী সবকিছু যেন ভালো লাগার মতো বিষয়। প্রেজেন্ট স্যার, পিরিয়াড, লেইজার, ঘন্টা, স্কুল পালানো এই শব্দগুলো তখনকার সময়ে ছিল প্রতিদিনের ভালো লাগার মতো বিষয়। কখনো খালি পায়ে, খালি গায়ে সে কি দৌড়। মনে হোত বাধাহীন কোন এক জগতে ছুটে চলা। মারামারির পর বিচার, বেঞ্চের উপর কান ধরে দাড়িয়ে থাকা, একজনের টিফিন অন্যজনে চুরি করে খাওয়া, বৃষ্টির দিনে কলাপাতা মাথার উপর দিয়ে কাদার মধ্যে বাড়ির পথে রওনা দেওয়া, ছেলে ধরার ভয় এসব কিছুই ছিল তখনকার সময়ে নিত্য দিনের বিষয়। ছোটবেলায় রাতের আধারে কুপি জ্বালিয়ে জোরে জোরে পড়ার আওয়াজ। কে কার চেয়ে বেশি জোরে পড়তে পারে। এমন প্রতিযোগীতা লেগে যেত ভাইবোনদের মাঝে। মনে হোত পাশের বাড়ি থেকে আমাদের পড়ার আওয়াজ পাচ্ছে সবাই।

প্রাইমারী স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে হাইস্কুল। আবারো সেই নতুন বই, নতুন সহপাঠী। পিটি করা, লাইন ধরে ক্লাসে যাওয়া, লেইজার, নামাজ পড়া। এবার পড়া না পারলে বেতের বারি খেতে হোত। কোন কোন দিন ক্লাসের এক দিক থেকে মারা শুরু হোত অন্য দিকে গিয়ে থামতো। পড়া না পারলে মার খাওয়ার ভয় কাজ করতো। তাই পড়া মুখস্ত রাখতে রাতে শব্দ করেই পড়তে হোত। মনে হোত কবে পার হবো মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে। স্কুল ছুটি হলে নদীর পাড়ে সুজাবাদের কেল্লা দেখতে যাওয়া। ভারত বর্ষের মোঘল সম্রাট শাহজাহান কে বন্ধি করে তার ছেলে আরঙ্গজেব। এরপর সিংহাসন পাওয়ার আশায় আরঙ্গজেব একে একে তার সব ভাইকে হত্যা করে। তার এক ভাই সুজা পালিয়ে তার অনুসারীদের নিয়ে ঘাটি করে এই গ্রামে। মাত্র এক রাতের মধ্যে সেখানে মাটির নীচে একটি এবং মাটির উপরে একটি কেল্লা নির্মাণ করেন তিনি। যেখানে চাল, ডাল, অস্ত্র, সেনা সব মজুদ রাখতেন তিনি। আর তার নামেই এই কেল্লাটি সুজাবাদের কেল্লা নামে পরিচিতি। এমনকি তার নামে নামকরন করা হয়েছে এই গ্রামের নাম সুজাবাদ। অনেকে এটাকে ভূতের কেল্লা বলেও ডাকতো। এটা আমার বাড়ির খুব কাছে নদীর পারে ছিলো।

এবার কলেজ জীবন। সবকিছুর যেন পরিবর্তন। আগের সেই বেত নেই। নেই সেই সহপাঠী, নেই আর আগের মতন শাসন। এখন আর ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করতে হয় না। শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন সাইকেল করে ৩০ কিলোমিটার আসা যাওয়ার পথ পাড়ি দিয়ে ক্লাস করা। কলেজ জীবনেও শব্দ করে পড়ার অভ্যাস টা ছাড়তে পারিনি।

এরপর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এবার সহপাঠীদের মধ্যে একধরনের ম্যাচুরিটি লক্ষ্য করলাম। খুব শৃঙ্খলাপূর্ণ এক জীবন। সবাই মুক্ত কিন্তু বেলও বাজে না কাউকে ডেকে ক্লাসেও আনতে হয় না। তারপরেও সবাই ক্লাস করে। স্যারদের লেকচার গুলো মুগ্ধ হয়ে সবাই শোনে। কারও খবর কারও নেয়ার সময় নেই। সহপাঠীরা ছোট ছোট দলে বিভক্ত। যাদের সাথে যাদের ভালো লাগা, তাদের সাথে তাদের পথ চলা। এখন আর জোরে পড়তে হয় না। শুধু চোখ বুলিয়ে যাওয়া।

কিন্তু এখন আর কোন বাড়ির পাশ দিয়ে গেলে কারও পড়ার আওয়াজ আসে না। কোন বাড়িতে কুপির আলো জ্বলে না। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুবিধায় অসংখ্য শিক্ষার্থী অপ্রয়োজনে ব্যবহার করছে স্মার্ট ফোন। আমাদের সময়ে যা ছিল না। বাধ্য হয়েই বই পড়ার বিষয়ে মনযোগী হতে হোত। বাবার শাসন, মায়ের শাসন, স্কুলে শিক্ষকদের শাসন সবকিছু মিলিয়ে সন্ধ্যার পর অনবরত দীর্ঘ সময় পড়া। বিকালে না ঘুমোলে পড়া। আজ সবই কেবলই স্মৃতি।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)


(সুজবাদের কেল্লা)