মোঃ রিসালাত মীরবহর।। মানুষ সামাজিক জীব। আর তাই মানুষকে সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এসব সমস্যাগুলো সমাধানে আমাদের মধ্যে অনেকেই এগিয়ে আসেন। কারণ মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সমাজ নানা ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু মানুষ সমাজবদ্ধ জীব তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই মানুষ তার সামাজিক মর্যাদাগুলো কে অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমানে সমাজিক এই পথ পরিক্রমা কিছুটা হলেও ব্যহত হচ্ছে। কেননা সামাজিক অবক্ষয় একটি মারাত্মক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে ঘটছে নানা অনৈতিক ঘটনা। ফলে মানুষ সামাজিক ভাবে যে শান্তি বা শৃঙ্খলার মধ্যে বসবাস করার কথা ছিল সে প্রত্যাশা অনেকাংশে বিঘ্নিত হচ্ছে।
বিশেষ করে কিশোর অপরাধ থেকে শুরু করে চুরি, ছিনতাই, মারামারি, রক্তপাত, মাদকের ব্যবহার পূর্বের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুুষের নিরাপত্তার ঝুকি তৈরি হচ্ছে। আর এসব সামাজিক অবক্ষয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সামাজিক এসব অবক্ষয় কেন ঘটছে? মূলত সু-শিক্ষার অভাব, বেকারত্ব, পারিবারিক সচেতনতার অভাব, পারিবারিক শিক্ষার অভাব, অসৎ সঙ্গ, ধর্মীয় অনুভূতির অভাব, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতার বিষয়ে পাঠদানের অভাব, মাদকের বিস্তার ইত্যাদি নানা করণে দিন দিন বেড়েই চলেছে সামাজিক অবক্ষয়।
এছাড়া ভালো কাজে একে অপরের সহযোগীতার অভাবে সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম কারণ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। যেমন ধরুন- সমাজে নানা শ্রেণী পেশার মানুষ বসবাস করেন। এদের মধ্যে দেখবেন কিছু মানুষ রয়েছেন যারা পরোপকারি ও নিঃস্বার্থবান। এসব মানুষ প্রতিনিয়ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছে। এরা আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করে না কিংবা প্রত্যাশাও নেই। মানুষের বিপদে আপদে তারা ঢাল হয়ে দাড়ান। কিন্তু তাদের এসব মহৎ কাজে আমরা অনেকেই উৎসাহ দেই না। বরং তাদের নিয়ে আমরা নানা বাজে মন্তব্য করে থাকি। ফলে একটি মানুষ সমাজিক ভাবে মানুষের উপকারে আসবে সে পথটিও কখনও কখনও বন্ধ হয়ে যায়।
অন্যদিকে কেউ যদি খারাপ কাজে কারও সহায়তা চায় সেটা অনায়াসে পেয়ে যায়। এমনকি এসব খারাপ কাজে খুব দ্রুত অনেক কে সংগঠিত করা সম্ভব হয়। ফলে যা দাড়ায়, ভালো কাজের মূল্যায়ন না পাওয়ার কারণে তা সমাজিক ভাবে আর সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এতে করে খারাপ কাজের পরিবেশ তৈরির সুযোগ পায়। এজন্য ভালো কাজের প্রশংসা এবং সমর্থন দুটোই প্রয়োজন। যাতে কেউ ভালো কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করলে যেন সে তা সম্পন্ন করতে পারে। সমাজে ভালো কাজের বিস্তার ঘটাতে হলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই না একজন আরেকজন কে দেখে শিখবে এবং সেও ভুল পথ থেকে ফিরে আসবে।
এজন্য আপনার এলাকায় যদি কেউ ভালো কাজ করতে চায় তবে তাকে পর্যাপ্ত উৎসাহ দিন। শুধু এলাকা না বরং যে কোন জায়গায় যদি কেউ ভালো কাজ করার ইচ্ছা নিয়ে এগিয়ে যেতে চায় তবে তাকে সহযোগীতা করুন। এতে করে অন্যরাও উৎসাহ পেয়ে এগিয়ে আসবে। ফলে যারা অন্যায়কারী তারা দেখে বুঝতে পারবে ভালো মানুষের সামাজিক ভাবে কদর বাড়ছে। শুধু তাই নয় তারা বেশ সম্মানী হয়ে উঠছে এবং সবাই তাদের ভালোবাসছে, শ্রদ্ধা করছে। সামাজিক ভাবে তাদের শক্ত অবস্থান দৃশ্যমান হয়ে উঠছে। ভালো কাজ করলে অবশ্যই মানুষ তাকে ভালোর মর্যাদা দিবে। এতে করে সামাজিক ভাবে অবক্ষয় কমে আসতে পারে।
অন্যদিকে যারা অন্যায়কারী, যারা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্ট করছে তাদের গুরুত্ব কমিয়ে দিতে হবে। যেমন: বিচার, সালিসের বৈঠকে তাদের না রাখা, গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে তাদের কে বর্জন করার মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক ভাবে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে সামাজিক ভাবে তাদের বয়কট করার মধ্যে দিয়ে অন্যায়কে প্রতিহত করতে হবে। ফলে তারা সামাজিক ভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। এতে করে সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে যেসকল মানুষ সামাজিক, ন্যায়পরায়ন, পরোপকারী, নিঃস্বার্থবান তাদের কে সামাজিক ভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। সকল ক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধীকার দেওয়ার মধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে।
সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্ত থাকতে হলে একটি সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। আর এই শিক্ষাটা প্রথম মানুষ পরিবার থেকে লাভ করে। তাই পারিবারিক সুশিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তানকে বুঝাতে হবে কোন কাজটি ভালো আর কোন কাজটি খারাপ। ছোট থেকেই সন্তানকে সুস্থ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে বেড়ে তুলতে হবে। তাকে সামাজিক বিভিন্ন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। যাতে সে মানুষের দরদগুলো বুঝতে পারে। তাকে অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে। এছাড়া সন্তানকে সুস্থ ধারার বিভিন্ন সাহিত্য ও সামাজিক সংগঠনের সাথে কাজ করার মানষিকতা তৈরি করতে হবে। এসব দায়িত্ব পরিবারকে নিতে হবে। পরিবার যদি এক্ষেত্রে ব্যার্থ হয় তবে সন্তানও ব্যার্থ হবে।
পারিবারিক শিক্ষার পরের ধাপ হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। প্রাতিষ্ঠানিক নৈতিক শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে সামাজিক অবক্ষয় থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। দেশের সকল স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। কি কাজের সাথে যুক্ত থাকলে দেশ ও মানুষের উপকার হবে তা বুঝাতে হবে। কোন কাজ গুলো অকল্যাণ বয়ে আনেবে সে সম্পর্কে তাদের ধারণা দিতে হবে। সৎ, যোগ্য ও আদর্শবান শিক্ষক দ্বারা তাদের পাঠদান করাতে হবে। যাতে তারা সত্যিকারের আলোকিত মানুষ হয়ে ওঠে এবং দেশ ও জাতীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারে। মনে রাখবেন সত্যিকারের বিবেকবান মানুষ কখনও নিজেকে অন্যায়ের সাথে শামিল করে না।
বিবেক হচ্ছে মানুষের সর্বোচ্চ আদালত। মানুষ যদি বিবেকবান না হয় তবে তার দ্বারা যে কোন অপরাধ সংঘটিত হওয়া কঠিন কিছু না। তাই বিবেকের দরজা খুলতে চাই সত্যিকারের সুশিক্ষা। একজন ভালো মানুষ দেশ ও জাতীর সম্পদ। তাই ভালো মানুষকে অগ্রাধিকার দিন, সম্মান দিন, গুরুত্ব দিন। যাতে সামাজিক অবক্ষয় গুলো থেকে আমরা কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে পারি। আর খারাপ কাজ ও খারাপ মানুষকে বর্জন করুন। যাতে সমাজ ঘুরে দাড়াতে পারে।
আমরা চাই প্রতিটি মানুষ সত্যিকারের বিবেকবান হবেন। সুশিক্ষায় সুশিক্ষিত হবেন। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবেন না। ন্যায়ের পক্ষে কথা বলবেন। এতে করে সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা পাবে। সাধারণ মানুষ সবাই সুন্দর ভাবে বসবাস করতে পারবেন। আমরা যেন একে অপরের উপকারে আসতে পারি। আমরা হানাহানি চাইনা। চাইনা অজথা কোন রক্তপাত। আমরা চাই মানুষ সুন্দর ভাবে পৃথিবীকে উপভোগ করুক। আসুন আমরা কবিতা লিখি, আমরা গল্প লিখি, আমরা নতুন দিনের আগমনের গান গাই, আমরা পাখিদের নিয়ে নীল আকাশের ছবি আঁকি। আমরা আমাদের মধ্যে সকল হিংসা, অহংকার ত্যাগ করি। সর্বপরি আমরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচি।
Risalat Mirbahar
Writer & Editor: Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]
Writer & Editor: Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]