Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে সামাজিক অবক্ষয় ঠেকানো সম্ভব নয়


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। সমাজ মানুষের সৃষ্টি। তাই মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে মানুষ অত্যন্ত সচেতন। সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমেই মানুষ মানুষকে সনাক্ত করতে পারে। কে ধনী, কে গরীব, কে খারাপ, কে ভালো এ বিষয়গুলো সমাজ থেকে মানুষ জানতে পারে। সামাজিক শৃঙ্খলা এমন একটি বিষয় যা না থাকলে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভঙ্গুর হয়ে যেতে পারে। তাই মানুষের বসবাসের উপযোগী হিসেবে সমাজিক শৃঙ্খলা খুবই জরুরী একটি বিষয়। যা না থাকলে সামাজিক বিভিন্ন অপরাধ বৃদ্ধি সহ সমাজিক অবক্ষয় দেখা দিতে পারে। যা মানুষকে সামাজিক ভাবে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে ফেলতে পারে। আর তাই সামাজিক শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হলে কিংবা সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে হলে সবাইকে নৈতিক শিক্ষা লাভ করতে হবে। যদিও বিষয়টি খুব সহজ নয়।

তবে একথা সত্য যে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে অবশ্যই প্রতিটি মানুষকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। এর বিকল্প ভালো কোন উপায় নেই। আইন কিংবা আদালত দ্বারা অপরাধীকে শাস্তির ব্যবস্থা করা হলেও অপরাধ কে শেষ করা যায় না। যদি তাই হতো তবে পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ হত্যা হয়েছে এবং এসকল হত্যার বিচারও হয়েছে। কিন্তু হত্যা কি থেমে গেছে? যায়নি বরং আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তাই মানুষ নৈতিক ভাবে নিজের বিবেক কে জাগ্রহ করতে না পারলে সামাজিক অবক্ষয় ঠেকানো বেশ কঠিন একটি কাজ। পৃথিবীতে এমন কোন ধর্ম খুজে পাওয়া যাবে না যেখানে নৈতিকতার বিষয়ে কম বেশি শেখানো হয় না। এর মূল কারণ যাতে করে ঐ ধর্মের মানুষ অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত না হয় কিংবা পথভ্রষ্ট না হয়।

একটি রাষ্ট্রে সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিলে নানা সমস্যা পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মাদকের বিস্তার, কিশোর গ্যাং এর উৎপাত, মারামারি, রক্তপাত, হত্যা সহ নানা সামাজিক অবক্ষয় দেখা দিতে পারে। আর এসব কারণে মানুষের মধ্যে নেমে আসে চরম দূর্ভোগ। এমনকি সামাজিক অবক্ষয়ের ফলে সুশাসন অনিশ্চিত হয়ে পড়ে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না থাকলে তা সমাজে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি করে। ফলে নাগরিকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এরকম পরিস্থিতি যত বেশি চলতে থাকবে তত বেশি সমাজে বিশৃঙ্খলা দেখা দিবে। ফলে মানুষের জন্য যে সমাজ মানুষ সৃষ্টি করেছিল সেটা একপ্রকাশ নীতিহীন সমাজ ব্যবস্থার ফল ভোগ করবে।

এজন্য রাষ্ট্র ও সমাজের প্রত্যেকটি নাগরিককে হতে হবে অত্যন্ত সৎ, আদর্শবান। তাদের চিন্তা ও চেতনায় সততা ও মহৎ গুণের অধিকারী হতে হবে। এতে করে সামাজিক অবক্ষয় ঠেকানো সম্ভব। এছাড়া সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দ্রারিদ্রতা লাঘবে জোর প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখতে হবে। একজন মানুষ যখন নৈতিক ভাবে নিজেকে গড়ে তুলবে এবং তার বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্রতার সমস্যা থাকবে না তখন সে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হবে না। ফলে সমাজের প্রতিটি নাগরিক হয়ে উঠবে আত্মনির্ভরশীল। এছাড়া নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি সমাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে রাষ্ট্রে ও সমাজে সু-শাসন নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে সত্যিকারে জনবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে। যাতে রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রতিটি নাগরিক এর সুফল ভোগ করতে পারে।

ধর্মীয় শিক্ষায় কোন কোন বিষয়ে বিধি নিষেধ রয়েছে সেগুলো সম্পর্কে সবার সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে এবং সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে হবে। তাছাড়া ভালো মানুষের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। যাতে আপনি বা আমি সেই মানুষটার কাছ থেকে ভালো কিছু শিখতে পারি। অন্যদিকে খারাপ মানুষগুলোর সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে। কারণ তারা আপনাকে ভুল পথে পরিচালনা করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা আপনার জন্য কি ভালো আর কি খারাপ সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। আর সে অনুযায়ী চলতে পারলে জীবন অনেক সুন্দর হবে।

Revenge of nature (রিভেঞ্জ অব ন্যাচার)। অর্থ- প্রকৃতির প্রতিশোধ। বলা হয়ে থাকে যে, “কেউ যদি কারও প্রতি জুলুম বা অন্যায় করে তাহলে আমরা তাকে ক্ষমা করলেও প্রকৃতি তাকে কখনো ক্ষমা করে না। মানুষ তার মন্দ কাজের শাস্তি কোনও না কোনোভাবে পেয়েই যায়। আগে হোক আর পরে হোক। শাস্তি সে পাবেই। মানুষ ভুলে গেলেও প্রকৃতি কিছুই ভোলে না এবং প্রকৃতি ক্ষমাও করে না।” এটাকেই ‘রিভেঞ্জ অব ন্যাচার’ বা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলা হয়। প্রকৃতি কখনই প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধ পরায়ণ হয় না। মহান আল্লাহর হুকুম ব্যতিরেকে সে কারও উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা রাখে না। কারণ তা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তারই নিয়ন্ত্রণাধীন। এ বিশ্বচরাচরে যা কিছু আছে তার একচ্ছত্র পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ একমাত্র মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হাতে রয়েছে।

কাজেই আপনি কিংবা আমি হয়তো এটা ভাবি যে, আমরা একটি অপরাধ করে পার পেয়ে যাব। আসলে বিষয়টি এমন না। আইজাক নিউটনের গতিসূত্রের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়ে থাকে- Every action has an equal and opposite reaction. অর্থাৎ প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যা জীবনের জন্যও আমি মনে করি অনেকটা প্রযোজ্য। যদিও তিনি প্রখ্যাত ইংরেজ পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রাকৃতিক দার্শনিক। তথাপি তার এই গতিসূত্রের তৃতীয় সূত্রটি মানুষের জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষনীয় বিষয়। আমরা যাই করি তা আমাদের কাছে কোন না কোন এক সময় ফিরে আসবে।

তাই সমাজিক অবক্ষয়ের যে বিষয়গুলো আমাদের সমাজকে দূষিত করে চলেছে সেই দূষিত বিষয়গুলোতে যাতে আমরা আক্রান্ত না হই সে বিষয়ে নিজ নিজ থেকে জোড়ালো পদক্ষেপ নিতে হবে। ন্যায়পরায়ন ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা আমাদের সত্যিকারে সুখী সমৃদ্ধ একটি জীবন উপহার দিতে পারে। যা সমাজে আমাদের সুশৃঙ্খল ভাবে বসবাস সহ জীবন মান উন্নত করতে বেশ সহায়তা করবে। আর তাই সামাজিক অবক্ষয় ঠেকাতে নৈতিকতার চর্চা ব্যতীত ভালো কোন বিকল্প হতে পারে না। কারণ মানুষের বিবেক হচ্ছে সর্বোচ্চ আদালত। এটা যদি কলুষিত হয় তবে একজন মানুষের মধ্যে নৈতিকতা বলতে আর কিছু থাকবে না। ফলে সে যে কোন অপরাধের সাথে যুক্ত হতেও বিন্দু মাত্র দ্বিধা বোধ করবে না।

পরিশেষে বলতে চাই আসুন আমরা শুধুমাত্র মানুষ নামের মানুষ না হই। বরং সত্যিকারের বিবেকবান, আদর্শবান, নীতিবান মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলি। আমরা যদি মানুষ হয়ে মানুষের উপকারেই না আসি তবে সেই মানুষ না হওয়াই বোধহয় ভালো। দেশকে ভালোভাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি। ছোট ছোট স্বার্থগুলো ত্যাগ করে আমরা সুন্দর জীবন গড়ি। আসুন আমরা পরিশ্রম করি এবং হালাল পথে নিজের ও পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ করি। কাউকে কষ্ট দেওয়া নয়, ভোগ বিলাশ নয় বরং মানুষের জন্য কাজ করি।

আসুন আমরা রৌদ্রজ্জ্বল সুন্দর একটি সকালের অপেক্ষায় থাকি। সে সকালে পাখিরা কিচিরমিচির করে ডাকবে। চারদিকে সুন্দর বাতাস বইবে। যে বাতাসে আমরা হারিয়ে যাব নতুন কোন প্রকৃতির রাজ্যে। যে রাজ্যে থাকবে অনাবিল সুখ, শান্তি। যেখানে সবাই গল্প করবে, কবিতা লিখবে। যেখানে সবাই মিলেমিশে থাকবে সবার সাথে। যেখানে কোন হিংসা থাকবে না, থাকবেন না কোন অহংকার কিংবা গড়িমা। যেখানে শুধুই মানুষের জন্য মানুষ ভালোবাসার এক সুন্দর বন্ধন তৈরি করবে। তাইতো শ্রদ্ধেয় কবি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত দুই লাইন মনে পড়ে যায়:-

“এমন জীবন তুমি করিবে গঠন,
মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন”

Risalat Mirbahar
Writer & Editor: Obalardak
E-mail:
 obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]