Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

নৈতিক শিক্ষার আগে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সনদ নয়: অবেলার ডাক সম্পাদক


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। মানুষ প্রাচীন কাল থেকেই তার পারিবারিক ব্যবস্থা, সমাজ ব্যবস্থা, পরিবেশ-পরিস্থিতি সহ বেঁচে থাকার জন্য সকল প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোকে উন্নত করতে সর্বদা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতায় নানা সময়ে এসেছে নানা পরিবর্তন। মানুষ সভ্যতার পালাবদলে শিখেছে অনেক কিছুই। পুরাতন ধ্যান ধারণায়ও এসেছে আমূল পরিবর্তন। যুগ যুগ ধরে এসব পরিবর্তন মানুষকে করেছে অনন্য। পরিণত করেছে আধুনিক সভ্যতার এক শ্রেষ্ঠ জীবে। মানুষ বুঝতে শিখেছে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সমাজ, সংস্কৃতি ও সভ্যতা সহ নানা বিষয়গুলো সম্পর্কে।

তথাপি আধুনিক যুগে এসেও আমরা যেন অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছি নৈতিকতা, সততা কিংবা উদারতার ও মহৎ কর্ম পরিকল্পনায়। উন্নত জীবনের আশায় আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় যেভাবে উন্নত হয়েছি, সেভাবে আমরা আমাদের নৈতিকতাকে উন্নতি করতে পারিনি। যার ফলে আমাদের অনেক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতি, আইনের সু-শাসন, নাগরিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, বেকারত্ব, সু-শিক্ষা, নিরাপত্তা, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত, সেবার মান উন্নয়ন সহ নানা বিষয়ে পিছিয়ে রয়েছি।

একটি রাষ্ট্রের সত্যিকারের উন্নতি তখনই সম্ভব যখন ঐ রাষ্ট্রের সকল নাগরিক তাদের নৈতিকতা দিয়ে দেশকে ভালোবাসবে। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করবে। দেশ সেবায় সত্যিকারে নিজেকে বিলিয়ে দেবে। অর্থাৎ যখন সকল নাগরিক মনে করবে একা একা ভালো থাকা নয় বরং সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে হয়। এছাড়া সকল বিষয়ে মানুষের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে একটি সুন্দর রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এজন্য অবশ্যই আইনের সু-শাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী। আর স্বচ্ছতা কিংবা জবাবদিহীতা ছাড়া আইনের সু-শাসন নিশ্চিত করা কখনো সম্ভব নয়। ফলে রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এক ধরনের অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে যা খুবই স্বাভাবিক।

আমাদের মানষিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা এখন এমন এক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি যেখানে অর্থকে উন্নত মানুষের ধারণা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। যেমন: যার অর্থ আছে সেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত এবং সম্মানিত ব্যাক্তি। কিন্তু এই অর্থ আয়ের উৎস কি? অথবা তিনি কি প্রক্রিয়ায় এই অর্থ উপর্জন করলেন সেটা দেখার বিষয় না। বরং তার অর্থ রয়েছে সেই সেরা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন। ফলে আর্থিকভাবে দুর্বল কিংবা সবল প্রকৃতির মানুষগুলো তাকে অনন্য এক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখছেন। যা তাকে আরও আর্থিক ভাবে সফল হতে সহায়তা করছে।

অথচ একজন মানবিক, দুর্নীতিমুক্ত, সৎ কিংবা আদর্শবান মানুষ আর্থিক ভাবে সচ্ছল না হওয়ায় আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় তাকে অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ফলে আমাদের সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তন নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ যে স্বপ্ন দেখি সেটা স্বপ্নের মধ্যেই থেকে যায়। বাস্তবতায় সেই আর্থিকভাবে সচ্ছল মানুষটি সেরা মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। যা সামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে একধরনের বৈষম্য তৈরি করে। ফলে সত্যিকারের ভালো মানুষগুলো তার প্রাপ্যতা থেকে অনেকটাই বঞ্চিত হয়। আর তাই সামাজিক ব্যবস্থায় অন্যায় প্রতিষ্ঠা পাওয়ার দারুন সুযোগ থাকে।

একজন মানুষ তখই শ্রেষ্ঠ যখন তার মেধা ও প্রজ্ঞাকে সে সত্যিকারের কাজে লাগাতে সক্ষম হবে এবং একই সাথে তার সচ্ছতা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিবেন। আর এজন্য সর্বপ্রথম শিশুকাল থেকেই নৈতিক শিক্ষার চর্চা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। একটি মানুষ যদি ছোট থেকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে না পারে তবে সে পরবর্তীতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন অপরাধে নিজেকে জড়াতেও দ্বিধাবোধ করে না। নৈতিক শিক্ষার চর্চার মাধ্যমে সেই অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়তো সম্ভব হতে পারে। তাই প্রতিটি শিশু বয়সে একজন মানুষকে অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। যা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ বের হওয়ার আগেই এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। অর্থৎ প্রতিটি শ্রেণীতে একজন শিক্ষার্থীর নৈতিক বিষয়গুলোর পরীক্ষা আবশ্যক। যাতে তার ভালো আচার-ব্যবহার, নৈতিকতা, আদর্শ, সততা ও মহৎ মানষিকতা গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

প্রতিটি শ্রেণীতে আলাদা একটি পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে ঐ বিষয়ে তাকে পাঠদানের মাধ্যমে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এমনকি তাকে বিভন্ন সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে ছোট থেকেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষ করে রক্তদান কর্মসূচি, দারিদ্রতা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা, মানুষের সেবা নিয়ে কাজ করা, দেশ ও জাতীর কল্যাণে তার ধারণা কেমন হয় তা জানা, বিভিন্ন দূর্যোগে তার পদক্ষেপগুলো কেমন তা পরীক্ষা করা, সামাজিক ভাবে সে কতটা জনবান্ধব তা পরীক্ষা করা। এসকল ধাপগুলোতে শিক্ষকরা তাদের তদারকী করার পর মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগে তাকে নৈতিক সনদ প্রদান করবেন। যাতে তার নীতি-নৈতিকতা সম্পর্কে সু-স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চলমান থাকবে। একজন মানুষ হিসেবে সে কেমন তা মাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার আগে নৈতিক সনদ প্রদানের মাধ্যমে পুরোপুরি স্পষ্ট হবে। ফলে কর্মক্ষেত্রে ঐ সনদের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। যে অকৃতকার্য হবে তার কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার সুযোগ ক্ষীণ হয়ে আসবে। প্রতিষ্ঠান তাকে অনুমোদন করবে না। যদিও তার প্রাতিষ্ঠানিক ফলাফল ভালো হয় তবুও নৈতিক সনদে তার অকৃতকার্যতা প্রমাণ হয় তবে তার কর্মক্ষেত্রে যোগদান কোনভাবেই নিশ্চিত করা যাবে না। ফলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক চর্চায় একধরনের প্রতিযোগীতা তৈরি হবে।

তবে শিক্ষকদের অবশ্যই সৎ ও আদর্শবান হতে হবে। তা না হলে এ প্রক্রিয়া ব্যাপক ভাবে বাধাগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ যেহেতু বিষয়টি শিক্ষকরা নিশ্চিত করবেন। তাই প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে যাচাই বাছাই করে তার নৈতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হয়ে তাদের নৈতিক সনদ নিশ্চিত করবেন। এভাবে যদি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক বিষয় সম্পর্কে একজন মানুষ সম্পর্কে সুস্পষ্ঠ ধারণা থাকে তবে তাকে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য গ্রহণ করা যেতে পারে। বাকী যারা নৈতিক সনদ পেতে অক্ষম হবেন তারা পরবর্তী শ্রেণীতেও এ বিষয়ে পরীক্ষা দিবেন। যদি শিক্ষার সবশেষ শ্রেণীতে সে নৈতিক পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন তবে তাকে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা যেতে পারে।

এভাবে কর্মক্ষেত্রেও তার নৈতিক সনদের ব্যবস্থা করতে হবে। যার মাধ্যমে ব্যাক্তির সত্যিকারের পরিচয় তুলে ধরা যেতে পারে এবং কর্মক্ষেত্রে তার পরবর্তী উন্নতি কিংবা অবনতির বিষয়ে নৈতিক সনদ দিয়ে যাচাই করে পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। এভাবে যদি নৈতিকতাকে শিক্ষা গ্রহণের প্রধান মানদন্ড হিসেবে দেখা হয় তবে আমার মনে হয় সত্যিকারের মানুষগুলো রাষ্ট্রের বিভিন্ন শাখায় তাদের অবদান রাখতে পারবেন। ফলে দুর্নীতি, ঘুষ, মিথ্যাচার, অনিয়ম, দারিদ্রতা সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন সমস্যাগুলোকে সমাধান করা সহজ হবে বলে আমি মনে করি।

আমরা চাই একটি সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা। চাই সুন্দর শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে। যেখানে থাকবেনা কোন অনিয়ম, থাকবেনা কোন অন্যায়। ফলে একটি রাষ্ট্র হবে মানবিক ও সৌন্দর্যমন্ডিত।

Risalat Mirbahar
Writer & Editor: Obalardak
E-mail:
 obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]