ছোট কবিতা মানে হচ্ছে জনপ্রিয়তা

মো. রিসালাত মীরবহর।। আমরা কম বেশি সবাই একটু আধটু লেখালেখি পছন্দ করি। নিজের লেখালেখির বিষয়ে আমাদের আগ্রহ কিংবা জল্পনা কল্পনার যেন কোন কমতি নেই। আমরা সবাই চাই যেন লেখাটা সুন্দর হয় এবং তা যেন পাঠক হৃদয়ে একটি প্রভাব ফেলতে পারে। আর যদি পাঠক হৃদয়ে প্রভাব পড়ে তবে তা জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসে। আর নিজের লেখার এমন জনপ্রিয়তা অর্জন করতে কেই-বা না চায়? একজন লেখকের লেখা একজন পাঠক তখনই পড়বে যখন সেই লেখকের লেখা দ্বারা একজন পাঠক ভালো কিছু উপভোগ করতে পারবে।

কিন্তু আমরা অনেক নবীন লেখক রয়েছি যারা তাদের লেখাগুলোকে ঠিক কিভাবে সাজাতে হয় তা বুঝে উঠতে পারি না। কিংবা লেখার কোন ফরমেটে কিভাবে লিখতে হয় তা জানি না। বিশেষ করে কবিতার ক্ষেত্রে আমরা এগুলো না বোঝার কারণে অনেক ক্ষেত্রে সে কবিতাগুলো প্রকাশ করতে সক্ষম হই না। নিচে আমি বিভিন্ন ফরমেটে কবিতা লেখার  বিষয়ে আলোচনা করছি:

০১। ম্যাগাজিন: দেশের অসংখ্য সাহিত্য সংগঠন রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত সাপ্তাহিক, মাসিক ও পাক্ষিক ম্যাগাজিন গুলো প্রকাশ করে থাকে। আমরা অনেকেই সেখানে লেখা জমা দিয়ে থাকি। ম্যাগাজিনে লেখার ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয় ১৬-২০ লাইনের কবিতা লিখলে তা অত্যন্ত চমৎকার হয়। কেননা এর বেশি কবিতা লিখলে তা পাঠক কোন কোন ক্ষেত্রে পড়তে অনিচ্ছা প্রকাশ করে। ম্যাগাজিনে কবিতা পাঠানোর ক্ষেত্রে একটি অন্যতম সমস্যা হচ্ছে আমরা অনেকেই রয়েছি যারা বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করে থাকি কিংবা উপরের অংশে তারিখ, কবি, লেখক অথবা সোজা দাগ টেনে রাখি। যা একজন সম্পাদকের জন্য বাড়তি সমস্যার কারণ হয়ে দাড়ায়। ‍উপরের অংশে শুধু কবিতার নাম ও কবির নাম লিখে পাঠালে তা খুবই অসাধারণ হয়। এছাড়া কবিতার লাইন গুলো যদি আমরা বড় না করে নির্দিষ্ট শব্দের মধ্যে রাখতে পারি, যেমন: প্রতি লাইনে ৫টি অথবা ৬টি শব্দের মধ্যে রাখতে পারি তবে তা দেখতে খুবই সুন্দর হয়।

০২। ই-পেপার: বর্তমানে বিভিন্ন ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকার ই-পেপার বের হয়ে থাকে। সাধারণত সাপ্তাহিক কিংবা মাসিক ই-পেপার প্রকাশ করা হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই রয়েছি যারা ই-পেপারে লেখা পাঠাই কিন্তু সে লেখাটা অনেক বড় করে পাঠাই। মূলত ই-পেপার হচ্ছে ১টি অথবা ২টি পৃষ্ঠার হয়ে থাকে। তবে সচরাচার ১টি পৃষ্ঠাই বের হয়। তাই এই অল্প পরিসরের জায়গায় ই-পেপারে মূলত দীর্ঘ লাইনের কবিতা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। এজন্য লেখকদের খেয়াল রাখতে হবে যাতে ই-পেপারে পাঠানো লেখা ৮-১২ লাইনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায়। এর পাশাপাশি প্রতি লাইন যদি ৫-৬ শব্দের মধ্যে রাখা যায় তবে তা পাঠক পড়তে স্বাচ্ছন্দ বোধ করবে।

০৩। গ্রুপ লেখা: বর্তমানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য সাহিত্যি সংগঠনের নিজস্ব গ্রুপ রয়েছে যেগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। আমরা অনেকেই গ্রুপ কবিতা লিখে জনপ্রিয়তা অর্জন করছি। তবে অনেকেই রয়েছি গ্রুপ কবিতাগুলোকে দীর্ঘ লাইন করে ফেলি। এমনকি একটি লাইনে কখনো কখনো ১২-১৪ টি শব্দও ব্যবহার করে থাকি। যা কবিতার সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট করে ফেলে এবং পাঠক কে তা পড়তে অনাগ্রহ করে তোলে। ফলে এতো কষ্টের একটি লেখা যদি পাঠক পড়তেই না চায় তবে সেই লেখাটি একেবারেই অর্থহীন হয়ে পড়ে।

০৪। নির্দিষ্ট বিষয়ে লেখা: আমরা অনেকেই রয়েছি একটি বিষয়ের উপর বারবার লিখতে ভালোবাসি। যা আমাদের ভাবনায় একধরনের অভ্যস্ততা তৈরি করে। ফলে পাঠক যখন খেয়াল করেন একই বিষয়ে আপনি লিখছেন তখন সে আপনার লেখা দেখে তা এড়িয়ে যেতে পারে। কারণ পাঠক হৃদয় লেখার মধ্যে ভিন্নতা খুজে বেড়ায়। যা তাকে আনন্দিত করে তুলতে পারে এবং পাঠ্যাভ্যাসে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু আপনি যদি একই বিষয়ে বারবার লিখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন তবে পাঠক প্রিয়তা হারিয়ে যেতে পারে। যেমন: আমরা বিরহ কিংবা ভালোবাসার কবিতা লিখতে পছন্দ করি। আর তাই সবসময় এ জাতীয় কবিতা লিখতে অভ্যস্ত হই। কিন্তু সব পাঠক এই বিষয়ে পড়তে পছন্দ করেন না। তাই আপনার লেখাটি তার চোখ এড়িয়ে যেতে পারে। তাই একজন লেখক হিসেবে লেখার বিষয়ে ভিন্নতা নিয়ে আসতে হবে। যাতে পাঠক মনে করেন আপনি লেখক হিসেবে সব বিষয়ে লিখতে পারদর্শী।

০৫। বানান ভুল: একজন লেখক হিসেবে সবচেয়ে যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা হচ্ছে লেখার মধ্যে যেন বানান ভুল না থাকে। আপনি অল্প লিখেন কিন্তু যতটুকু লিখেন ততটুকু যেন সঠিক থাকে। প্রয়োজনে বাংলা অভিধান কিংবা এন্ড্রয়েড মোবাইলের এ্যাপসের মাধ্যমে বানান ভুল না সঠিক তা যাচাই করে নিচে পারেন। কারণ আপনার ভুল বানানের কারণে পাঠক আপনার লেখা পড়তে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। এছাড়া আমরা অনেকেই রয়েছি যারা লেখায় দাড়ি, কমা কিংবা সেমিকোলন আমাদের নিজেদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করে থাকি। বিষয়টি খুবই চিন্তার। তাই আপনাকে অবশ্যই সঠিক ভাবে জানতে হবে লেখার ঠিক কোথায় কোন চিহ্ন বসালে একটি বাক্য সঠিক হিসেবে দৃশ্যমান হবে। লেখক হিসেবে এ বিষয়ে অবশ্যই দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

০৬। ছোট কবিতা: আমরা অনেকে আছি যারা পড়তে পছন্দ করি না। আর তাই দিনদিন পাঠক হারাচ্ছি। তবে আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে লেখকরা পাঠক ধরে রাখতে বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে পাঠক হারাতে বসেও হারাচ্ছে না। লেখকদের এমন উদ্যেগ সত্যিই প্রশংসার দাবীদার। আপনার একটি কবিতা যত ছোট হবে তত পাঠক তা পড়তে আগ্রহ প্রকাশ করবে। আপনি যদি অনেক বড় কবিতা লেখেন এবং পাঠক যদি তা নাই পড়ে তবে তা অর্থহীন। একটি ১২-১৬ লাইনের কবিতার মধ্যে যদি আপনি পাঠক কে যে বিষয়ে বার্তা দিতে চাচ্ছেন সেই বিষয়টি বুঝাতে পারেন এবং পাঠক যদি তা বুঝতে পারে তবে পাঠক তা আনন্দ চিত্তে গ্রহণ করে। ফলে পরবর্তীতে পাঠক সেই লেখকের লেখা মনে জায়গা করে নেয়। আমি অনেক লিখলাম কিন্তু সেটা  কেউ পড়লোনা। তখন সেই লেখাটা স্বার্থকতা হারায়। কাজেই আমরা চেষ্টা করবো যাতে ছোট লেখার মাধ্যমে আমরা আমাদের পাঠক প্রিয়তা ধরে রাখতে পারি। কেননা ছোট কবিতা মানে হচ্ছে জনপ্রিয়তা।

Risalat Mirbahar
Writer & Editor: Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]