সম্পাদক, অবেলার ডাক।। অদম্য ইচ্ছেশক্তি থাকলে জীবনে অনেক ভালো কাজই করা যায়। সাহিত্যকে ভালোবাসতে গিয়ে সেটাই করে দেখিয়েছে ভোলার নাঈম। পরিচয়টা কয়েক মাস আগের। ভোলা থেকে কল দেয় একটি ছেলে। অত্যন্ত বিনয়ের সাথে স্যার বলে সন্বোধন করে কথা বলতে শুরু করে সে। যতটুকু কথা বলছিলো ততটুকুই তার প্রবল আগ্রহ অবেলার ডাক ম্যাগাজিনকে নিয়ে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম ওর কথা। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো দু’চারটে কবিতা ছাপিয়ে ভুলে যাবে অবেলার ডাক কে। কিন্তু তার আগ্রহ যেন দিন দিন বাড়তেই থাকে। সাথে অবেলার ডাক কে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় সে চেষ্টাটা তার ভিতরে খুব বেশি কাজ করছিলো। এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলাতে প্রায় ৩৮ জন প্রতিনিধি অবেলার ডাক নিয়ে কাজ শুরু করেন। যাদের মধ্যে এখনো অনেকে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু ভোলার নাঈম যেন একটু ব্যতিক্রম। নাছোরবান্দা। হঠাৎ করেই অবেলার ডাকের ভালোবাসায় ছুটে চলে আসে ভোলা থেকে বরিশালে। প্রথমে কুশল বিনিময় পরে দু’জনে কথা বলি অবেলার ডাক নিয়ে।
খুব স্বল্প সময়ের স্বাক্ষাত। কিছুদিন পর নাঈম আমাকে ফোন দেয়। ততদিনে সম্পর্ক গড়ায় ভাইয়ে। বয়স তেমন একটা না। ৯ম শ্রেণীতে পড়ে। যতটুকু কথা বলে ছেলেটা ততটুকু খুবই সাজানো গোছানো। মনে হয় হয়তো আমার সাথে কথা বলার আগে বেশ কয়েকবার কথা বলার চর্চা করে তারপর আসে। সাহিত্যের বাইরে ও কিছু বুঝেনা। ওর মাথায় কেবল একটি বিষয় কাজ করে অবেলার ডাক কে কিভাবে প্রসারিত করা যায়। এর মধ্যে আমি অবেলার ডাক নিয়ে খুব হতাশ হয়ে পড়লাম। লেখকরা অনেকেই লেখা জমা দেয়। কিন্তু তার সৌজন্য কপি আবদার করে বসেন। যা একেবারেই আমার সামর্থের বাইরে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে আমাদের মতো লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদকদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হয়। যা অনেকে বুঝতে চায় না বা বোঝার চেষ্টাও করে না। তবে দেশ-বিদেশ থেকে অনেক লেখক পাশে থেকে যুগিয়েছেন সাহস আর ভরসা। তাদের প্রতি রইলো অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। সবাই একটা কথাই বলতো আমাকে- আপনি পারবেন, সামনে এগিয়ে যান। আল্লাহর রহমতে আমরা আছি তো। তাদের সেই আশ্বাসে আমি অনেকটা সাহস ফিরে পাই।
হঠাৎ একদিন রাতে নাঈমের ফোন। ভাইয়া, আমি আমাদের ভোলাতে অবেলার ডাকের প্রোগ্রাম করতে চাই। ওর কথা শুনে আমি বললাম, পাগল নাকি আপনি? পারবেন করতে? খরচ পাবেন কোথায়? ও নিয়ে আপনি কোন চিন্তা করবেন না ভাইয়া। আল্লাহ সহায় হবেন। পুরোদমে সে আর তার টিম কাজ শুরু করে দিল অবেলার ডাক ম্যাগাজিনের ভোলার প্রোগ্রামের। বেশ কয়েকজন কে নিয়ে কমিটি করে অবেলার ডাকের প্রচারণা শুরু করলো ভোলার বেশ কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায়। সে কি ছোটাছুটি প্রোগ্রাম করবে বলে। আমাকে সব আপডেট জানাচ্ছিলো। আমি ওর সাহস দেখে নিজেই ভয় পেয়ে গেলাম। অবেলার ডাকের লোগো ব্যবহার করে টি-শার্ট বানিয়ে ফেলল, ব্যানার করলো, অতিথীদের ইনভাইট করলো, অতিথীদের খাবারের ব্যবস্থা করলো। এ সব কিছুই যেন স্বাপ্নের মতো মনে হতে লাগলো। আমি শুধু ভাবছিলাম ছেলেটা পারবে তো?
অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টায় একে একে অতিথীদের আগামন ঘটলো ভোলার চরফ্যাশন প্রেস ক্লাবে। আগত প্রায় দুই’শত এর অধিক শিক্ষার্থী। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জনাব মো: মহীউদ্দীন, উপজেলা সহকারী পোগ্রামার জনাব মো: বিল্লাল হোসেন, চর ফ্যাশন রেসিডেন্সিয়াল মডেল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আল আমিন, চরফ্যাশন সরকারি টি ব্যারেট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তাসলিমা বেগম সহ আরো অনেক গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ। জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে শেষ হলো সেই আয়োজন।
আমি হতবাক হয়ে কেবল চেয়ে চেয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখতে লাগলাম। এটা ছিলো আমার সাহিত্য জীবনের প্রথম কোন সাফল্য। যা পেয়েছিলাম ভোলার কৃতি সন্তান ও সাহিত্য প্রেমিক নাঈম ও তার সহযোগীদের হাত ধরে। ছেলেটা কথা খুব কম বলে তবে তার কাজের ধারণা অনেক প্রসিদ্ধ। অনুষ্ঠানের ভিডিওটি টিভি চ্যানেলে প্রচারের জন্য অনেকের কাছে সহযোগীতা চেয়েছিলাম আমি এবং নাঈম। কিন্তু অনেকের কাছে পেলাম না সে সহযোগীতা। তবে দুঃখ নেই হয়তো কোন একদিন অবেলার ডাক নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারিত হবে এই আশায় অপেক্ষায় রইলাম আমরা।
অনুষ্ঠানটি ছিলো কুইজ ও কবিতা প্রতিযোগীতার। ভোলার চরফ্যাশনের বিভিন্ন স্কুল থেকে অনেক শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেছে অনুষ্ঠানটিতে। তবে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়নি। আগামী দু’মাসের মধ্যে অবেলার ডাক ম্যাগাজিনের আয়োজনে পুরুস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান করতে চায় নাঈম। এছাড়া পুরুস্কার হিসেবে নাঈম বই বিতরণ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু এতো বই আমরা কোথায় পাবো? আমরা ফেসবুকে প্রচারণা শুরু করলাম। আল্লাহর রহমতে অনেক লেখক এগিয়ে এসেছেন বই পাঠানোর জন্য। তাদের বইগুলো পৌছে যাবে দ্বীপ জেলা ভোলার প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মাঝে। এই পুরো বিষয়টি আমাকে সত্যিই যেমন অনেক আনন্দ দিয়েছে তেমনি করেছে মুগ্ধ। আর মাঝে মধ্যে নাছোরবান্দা নাঈম ছেলেটার কর্মকান্ডে মনে হয় ও অনেকদূর যেতে পারবে। কারণ ওর মধ্যে আমি যেটা খুজে পেয়েছি সেটা হলো ওর অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
Writer & Editor: Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]