সততা কোন যোগ্যতা নয়

মোঃ রিসালাত মীরবহর।। কথায় বলে সততাই উৎকৃষ্ট পন্থা। যিনি সৎ থাকতে পারেন তিনি প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ করেন না। কারণ তার সততার বিনিময়ে প্রকৃতি তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। বলতে গেলে প্রকৃতি এবং একজন সৎ মানুষ খুবই ভালো বন্ধু। তাই একজন সৎ ব্যাক্তির বিপরীতে গিয়ে প্রকৃতি কখনও অন্যায় করে না। আর তাই একজন সৎ মানুষ সমসাময়িক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যসব মানুষগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে থাকেন। কারণ একজন সৎ মানুষ কখনও ভোগ বিলাসে নিজেকে বিলিয়ে দেন না। তার কাছে তার সততাই পৃথিবীর যে কোন লোভ, লালসারে চেয়ে অনেক বেশি দামী। তবে এমন সৎ মানুষ খুজে পাওয়া অনেক কঠিন। বর্তমানে সৎ মানুষের সংখ্যা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। তবে কিছু মানুষ আছে যারা হৃদয়ে এখনও সততাকে লালন করেন। আর তারাই হচ্ছেন সত্যিকারের মানুষ।

রাস্তায় আপনি যে কোন পরিচিত মানুষ দেখলে বলতে পারবেন মানুষটি কে এবং কেমন? আর এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা খুজে পেতে আপনার ব্রেইন আপনাকে যথেষ্ট সহায়তা করবে। কেননা আপনার ব্রেইন আপনার অগোচরে সেই মানুষটি সম্পর্কে ধারণা নেয়। বিশেষ করে ধারণাকৃত মানুষটির কার্যক্রমকে কোন না কোন ভাবে মূল্যায়ন করে। তাই আপনি একজন মানুষ দেখলে সহজেই বলতে পারেন সেই মানুষটি সৎ নাকি অসৎ। স্বাভাবিক ভাবেই সৎ মানুষগুলো সম্পর্কে আপনার পজেটিভ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। যা আপনাকে ন্যায় ভিত্তিক ধারণা পেতে সাহায্য করে। একজন মানুষ কে চিনতে তার কাজগুলোকে মূল্যায়ন করলেই বোঝা যায় তিনি কোন ধরণের ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন।

অনেকের প্রশ্ন সৎ মানুষগুলো কেন পিছিয়ে রয়েছে? এর বিভিন্ন কারণ রয়েছে। তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে সততা কোন যোগ্যতা না। এটা এমন নয় যে, আপনি সততার একটি সনদ বানিয়ে তা মানুষ কে দেখাবেন আর অমনি আপনার একটি ভালো বেতনের চাকরি কিংবা জীবিকা নির্বাহের উপায় বের হয়ে যাবে। আমার জীবনে বেশ কিছু পরিচিত মানুষের ব্যাক্তিগত সার্ভিস লাইফ বিশ্লেষন করে আমি যা পেয়েছি তা অত্যন্ত মন্দ। আমার পরিচিত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের নূন্যতম যোগ্যতা নেই একটি চাকুরি পওয়ার। 

কারণ মাধ্যমিক পাশের আগেই তারা ঝড়ে পড়েছে শিক্ষাঙ্গন থেকে। এমনকি বেতন ওঠাতে যে স্বাক্ষর প্রদান করতে হয় সে স্বাক্ষরটাও তারা দিতে জানতো না। অথচ কোন না কোন ভাবে তারা জীবনে সফল। কেননা তারা কর্ম জীবনে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সুবিশাল বাড়ি কিংবা গাড়ি কিনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তার এ সফলতার পিছনে সততার কোন মূল্যায়ন করা হয়নি। অন্যদিকে একজন সৎ মানুষ পড়ে আছেন অতি কষ্টে। যার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তিনি জীবিকা নির্বাহের উপায় খুজে বের করতে পারছেন না। এটা সৎ মানুষের জন্য ব্যার্থতা নয় বরং সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা এর জন্য অনেকাংশে দায়ী।

অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি, চুরি, মানুষ কে জিম্মি করে অর্থ আদায়ের মতো ঘটনা আমাদের দেশে একটি স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। যেখানে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার ব্যবস্থা হয়, সেখানে সততার চিন্তা করাটাও বোকামী। আর এর ফলে বাস্তব ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষগুলো। অর্থাৎ যোগ্য মানুষ যদি যোগ্য স্থান না পায়, তবে তার পরিণতি পরিবার, সমাজ এমনকি গোটা দেশকে বহন করতে হয়। কারণ একজন অসৎ মানুষ কখনও তার যোগ্যতা দিয়ে জীবনে সফল হন না। অথচ আপনার আমার দৃষ্টিতে সে দৃশ্যমান সফল একজন মানুষ। তার যোগ্যতা বিবেচনা করা হয় তার উপার্জিত অর্থের উপর ভিত্তি করে। মানুষ দেখছেন তিনি অঢেল অর্থের মালিক। কাজেই তাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি হিসেবে মনে করেন। অথচ এই অর্থ তিনি কিভাবে অর্জন করলেন সে বিষয়ে কারও কোন মাথা ব্যাথা নেই অথবা থাকলেও তা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

সৎ মানুষ ও অসৎ মানুষের মধ্যে দিন দিন যে পাথক্য তৈরি হচ্ছে তা খুবই ন্যাক্কার জনক এক বৈষম্য। কেননা অসৎ মানুষের মান মর্যাদা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক বৈষম্য। অসৎ মানুষগুলো তারা অন্যায়ের মাধ্যমে দিন দিন ফুলে ফেপে অঢেল অর্থের মালিক হচ্ছেন। অন্যদিকে যোগ্য ও সৎ হওয়া সত্ত্বেও তিনি পড়ে আছেন সমাজের নিম্নস্তরে। এই বৈষম্য মানুষকে মানুষের মধ্য থেকে আলাদা করে দিয়েছে। যা খুবই দুঃখজনক। কিন্তু আমি বা আপনি কিভাবে বুঝবো একজন মানুষ সৎ? যেহেতু সৎ মানুষ নির্ধারণ করার কোন উপায় নেই। তাই কর্মক্ষেত্রে কাউকে আলাদা করাও সম্ভব নয়। আবার একজন সৎ মানুষও অনেক সময় অসৎ মানুষে পরিণত হতে পারেন। কাজেই দৃষ্টিভঙ্গি ব্যতীত কর্মক্ষেত্রে সৎ ও অসৎ মানুষের মধ্যে বিভাজন করা আমাদের পক্ষে কোনভাবেই সম্ভব নয়।

কথায় আছে, কর্মই ধর্ম। একজন মানুষ কেমন তা তার কাজের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। আপনার কাজই বলে দিবে আপনি কে? আর কি আপনার পরিচয়? প্রকৃতি কখনও কারও প্রতি অন্যায় করে না। প্রকৃতি তার আপন মনে বিচার করে থাকে। সময় হলে প্রকৃতি সুযোগ বুঝে প্রত্যেকটি অন্যায়ের হিসেব ফিরিয়ে দিতে কখনও কার্পণ্য করে না। আপনি যদি ভালো কাজ করেন আপনার জন্য রয়েছে ভালো উপহার, আর যদি খারাপ কাজ করেন আপনার জন্য রয়েছে দুঃখ আর দুর্দশা।

আসুন আমরা সততা দিয়ে আমাদের জীবন কে গড়ে তুলি। সত্যিকারের মানুষের মতো মানুষ হই। মানুষের উপকারে আসি। কারও ক্ষতি না করি। এই পৃথিবী ছেড়ে একদিন বিদায় নিতে হবে। এমন কিছু ভালো কাজ করে যাই যাতে করে পরবর্তী পৃথিবীর মানুষের কাছে আমরা স্মরণীয় হয়ে থাকি। হয়তো সেই ভালো কাজগুলোর জন্য পরকালে আমাদের জন্য থাকবে উত্তম পুরুস্কার। অর্থ দিয়ে নয় বরং মানুষকে মূল্যায়ন করি তার সততা ও আদর্শ দিয়ে।

Risalat Mirbahar
Writer & Editor: Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com,
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +8801516332727 (What's App)
Copyright Ⓒ 2025 । All Right Reserved By Obalardak [Click More]