Hot Widget

Type Here to Get Search Results !

Headline

Notice: To read this website in your country's language, please change the language. Contact us for advertising: +8801516332727 (What's App) Thank you.

পাঁচ টাকায় কোটি টাকার হাসি


মোঃ রিসালাত মীরবহর।। জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমাদের ছুটতে হয় প্রতিদিন প্রতিনিয়ত এখান থেকে ওখানে। যাতায়াতের জন্য চড়তে হয় বিভিন্ন যানবাহনে। ৩/৪ দিন আগে এমনি একটি বাহনে চড়ে যাচ্ছিলাম গন্তব্যে। বাহনটি হলো হলুদ অটো। আমাদের শহরে অল্প খরচে বলতে গেলে এই বাহনটি খুব জনপ্রিয়। সহজেই হাতের নাগালে পাওয়া যায়। বিকেলে এমনি একটি অটোতে চড়ে যাচ্ছিলাম বাসার দিকে। আমার সাথে অন্য যাত্রীরাও ছিল। এর মধ্যে সম্ভবত কলেজ পড়ুয়া একটি ছেলে ছিল। সে ড্রাইভারকে বলল ভাই সামনে আমি নামব। আমায় একটু নামিয়ে দিবেন। ড্রাইভার গাড়ি থামালো। এ পর্যন্ত সবকিছু ঠিক ছিল। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে ছেলেটির মানিব্যাগে ১০০ টাকার নোট। কিন্তু তার ভাড়া হয়েছে মাত্র ৫ টাকা। ড্রাইভারকে যখন হাত বাড়িয়ে ১০০ টাকার নোট খানা দিল তখন ড্রাইভার জোরে বলে উঠল, আপনি খুচরা দেন। আইছে ৫ টাকার ভাড়া ১০০ টাকা দিছে। ছেলেটি বলে উঠল, ভাই খুচরা তো নেই। এরপর ড্রাইভার অকথ্য ভাষায় দু’চারটি গালমন্দ করে বলে উঠল টাকা খুচরা করে নিয়ে আসেন দোকান থেকে। ছেলেটির মুখে অসহায়ের ছাপ। 

চোখের সামনেই দেখছি এ দোকান থেকে ও দোকান যাচ্ছে। কেউ ১০০ টাকা খুচরা দিচ্ছে না। অল্প সময়ের মধ্যেই অসহায়ের মতো ফিরে এলো গাড়ির কাছে। এখন অটো ড্রাইভার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে তার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিল। মাত্র ৫ টাকার জন্য এমন দৃশ্য মোটেই আমার কাছে ভালো মনে হয়নি। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম ছেলেটির মুখে এই মুহুর্তে অসহায়ত্বের ছাপ। মনে হচ্ছে টাকা থাকতেও সে অন্যের গালাগাল শুনতে বাধ্য হচ্ছে। গাড়ির অন্য সবাই বিষয়টি চেয়ে দেখছে। এক প্রকার নীরবতা পালন করছে অন্য সবাই। হয়তো অনেকের কাছে টাকাটা খুচরা ছিল অথবা ছিল না। কিন্তু কি আশ্চর্য্যের বিষয় কেউ ছেলেটিকে সহায়তার জন্য এগিয়ে আসলনা। ছেলেটি অটো ড্রাইভারের ব্যবহারে হতভম্ব হয়ে গেল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে আক্রমনাত্বক ভাষা ছুড়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করছেনা ড্রাইভার। সম্ভবত ছেলেটি একটু ভদ্র। না হয় অন্য কোন ছেলে হলে এতোক্ষনে অটো ড্রাইভারের সাথে এক প্রকার হাতাহাতি কিংবা মারামারি হয়ে যেত।

এমন অবস্থায় আমি সাথে সাথে ড্রাইভারকে বলে উঠলাম, ভাই যাত্রীর কাছে খুচরা নাই আপনি ওনার সাথে এমন ব্যবহার করছেন কেন? ড্রাইভার রেগে বলে উঠল, দেখেন ভাই গাড়িতে উঠবে টাকা দিবে আস্ত। আমরা খুচরা পাই কই বলেন? ড্রাইভারও নাছরবান্দা, টাকা না নিয়ে যাবে না। এবার আমি ড্রাইভারকে বললাম, আপনি গাড়ি চালান, ওনার ভাড়া আমি দিয়ে দিব। ছেলেটি হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কথাটি শুনেই মুহুর্তে মনে হচ্ছে ওর চোখে মুখে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। মুখে একটি হাসি দিয়েই বলে উঠল, ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। ঠিক এই মুহুর্তে ওর এই হাসিটি আমার কাছে মনে হয়েছে কোটি টাকার মতো। এবার গাড়ি আমার গন্তব্যে এসে পৌছাতেই ড্রাইভারকে টাকা দিয়ে বললাম-

- ভাই ওনার কাছে টাকা নেই এজন্য কতকিছু বললেন। এই ৫ টাকা আপনার না হলেও তো চলতো। আপনি মারা যাবেন না? নাকি সারাজীবন বেঁচে থাকবেন?

ড্রাইভার- না ভাই মরতে তো হবেই।
- তাহলে আমি একটি কথা বলবো শুনবেন?
ড্রাইভার- জ্বী বলুন ভাই।
- আপনি যে টাকা রোজগার করেন তার উপর মানুষের হক আছে আপনি তা জানেন?
ড্রাইভার- হ্যাঁ ভাই।
- আপনার সব টাকা আপনি ঘরে নিয়ে যাবেন আর একা ভোগ করবেন এটা কোথায় আছে বলেন? আপনার আয়ের উপর আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয় স্বজন, পারা-প্রতিবেশি এমনকি একজন অচেনা মানুষেরও হক আছে। যদি কেউ বিপদে পড়ে তবে তাকেও সহায়তা করতে হবে।

ড্রাইবার- হয় বুঝছি ভাই, বিষয়ডা এইভাবে তো ভাবি নাই। ভুল হয়ে গেছে ভাই।

- মাত্র ৫ টাকার জন্য আপনি ওনাকে কষ্ট দিলেন। প্রতিদিন আপনি ৭০০-১০০০ টাকা কামান। এরমধ্যে ৫ টাকা ছেড়ে দিলে কি আপনার খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত?

ড্রাইভার- ভাই বিশ্বাস করেন এভাবে ভাবি নাই কখনো।

- ড্রাইভারকে খুব নরম ভাবে বললাম, দেখেন ভাই দুনিয়া দুই দিনের। এমন কোন ব্যবহার মানুষের সাথে করবেন না যাতে সে কষ্ট পায়। এরপর ওনাকে ঐ ছেলের ভাড়া সহ আমার ভাড়া বুঝিয়ে দিলাম।

এর ঠিক পরদিন। আবারও বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করলাম ঠিক একই পথ ধরে। গতকাল ঐ ছেলেটি যে জায়গায় দারিয়ে ছিল ঠিক একই জায়গায় দাড়িয়ে আমি অটো ড্রাইভারকে ভাড়া দিতে গেলাম। মানিব্যাগে ১০০ টাকা ছাড়া অন্য কোন নোটই নেই। কি আশ্চর্য্য গাড়িতে ওঠার আগেও বিষয়টি আমি লক্ষ্য করিনি। ১০০ টাকা ড্রাইভারকে বাড়িয়ে দিতেই সে জানাল ভাই ১০০ টাকা খুচরা নাই।

- ভাই আমার কাছেও তো খুচরা নেই। হাতে টাকা নিয়ে দারিয়ে আছি। গাড়িতে সবাই তাকিয়ে আছে। সবাই নীরবতা পালন করছে। মনে হচ্ছে গতকাল আর আজকের মধ্যে পার্থক্য শুধু এতটুকুই গতকাল আমি গাড়িতে বসে ছিলাম আর আজ আমি দাড়িয়ে আছি। ঠিক যেন ঐ ছেলেটির মতো। গাড়ির অন্যযাত্রীরা কেউ এগিয়ে আসলনা বিষয়টি নিয়ে। মনে হচ্ছে তারা কেবলই নীরব দর্শক। এমন সময় ড্রাইভার বলে উঠল-

ড্রাইভার- ভাই আপনার ভাড়ার ৫ টাকা লাগবে না। আপনি এই টাকাটা কোন একটা মসজিদে দিয়ে দিয়েন।

- শুনেই আমার কাছে মনে হয়েছে কোন একটি খারাপ পরিস্থিতি থেকে মহান আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। এমনতো হতে পারতো আজকের এই অটো ড্রাইভারও আমাকে ৫ টাকার জন্য গালাগালি করতে পারতো।

সবসময় একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা যাই করিনা কেন তার প্রতিদান কোন না কোন ভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসে। হোক সেটা ভালো অথবা খারাপ। মানুষের উপকারে যদি মানুষ হয়ে আমরা না আসতে পারি তবে মানুষ নামের পরিচয় দিয়ে কি লাভ আমাদের? কেউ বিপদে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকলে আপনিও একদিন বিপদে পড়লে অন্যরাও ঠিক আপনার মতোই দর্শকের ভূমিকায় থাকতে পারে। তাই আসুন যতটুকু সম্ভব মানুষের উপকারে আসি।

Writer & Editor। Obalardak
E-mail: obalardak@gmail.com
Barishal Sadar, Barishal, Bangladesh
Mobile: +88 01516332727 (What's App)